খাগড়াছড়িতে তুলা চাষে নতুন আশা

খাগড়াছড়িতে উন্নতমানের তুলা চাষে নতুন আশার সৃষ্টি হয়েছে। চাষিরা বলছেন, ফলন খুব ভালো হয়েছে। কৃষিবিদরা বলছেন, পুরো জেলায় পরিকল্পিতভাবে তুলার চাষ করা গেলে দেশের চাহিদা পূরণে অবদান রাখতে পারবেন পাহাড়ের চাষিরা।

খাগড়াছড়ি তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ৩৮৪ হেক্টর জমিতে উন্নতমানের তুলার চাষ হয়েছে। পাশাপাশি চার হাজার হেক্টর জমিতে স্থানীয় তুলার চাষ হয়েছে। তবে স্থানীয় তুলার মান খুব ভালো নয় বিধায় এখন উন্নতমানের তুলা চাষে মনোযোগ দিয়েছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। ইতোমধ্যে নয় উপজেলা থেকে প্রায় ১০০ কৃষককে তুলা চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ির মাটি তুলার চাষের জন্য উপযোগী এবং সবাই মিলে এদিকে নজর দিলে তুলা উৎপাদন বাড়বে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় তুলা প্রতি হেক্টরে সাত থেকে আট মণ উৎপাদন হলেও উন্নতমানের তুলা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত হচ্ছে। খাগড়াছড়িতে প্রায় ২০০ কৃষক স্থানীয় কিংবা উন্নতমানের তুলা উৎপাদন করছেন। পাশাপাশি আরও কিছু কৃষক তুলা উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছেন। দেশে তুলার চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭০ লাখ বেল, উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১০ লাখ বেল। বাকি ৬০ লাখ বেল তুলা আনতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয়।

বিশ্বে তুলা আমদানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে আছে বলেও জানিয়েছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তবে তুলা চাষে বেশ সফল হয়েছেন বলে দাবি স্থানীয় চাষিদের।

জেলায় চলতি বছর ৩৮৪ হেক্টর জমিতে উন্নতমানের তুলার চাষ হয়েছে

মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি এলাকার চাষি রুইপ্রু মারমা বলেন, আমাকে তুলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এরপর তুলার বীজ থেকে চারা উৎপাদন এবং চাষ করছি। চলতি বছর প্রায় ৪ হেক্টর পাহাড়ি ও সমতল জমিতে তুলা চাষ করেছি। তুলা চাষে খুব বেশি খরচ হয় না। পতিত জমি চাষের আওতায় এনে চার মাসে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করতে পারবো। তুলা বিক্রি করতে কোনও সমস্যা হয় না।কারণ তুলা উন্নয়ন বোর্ড বিক্রির ব্যবস্থা করে দেয়।

খাগড়াছড়ি সদরের কুকিছড়া এলাকার তুলা চাষি সুচিত্র চাকমা বলেন, পতিত প্রায় দুই হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করেছি। তুলা চাষ করে চার মাসে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করতে পারবো। আমার মতো এই এলাকায় আরও ২০ জন তুলা চাষ করেছেন। তারাও সফলতা পেয়েছেন।

খাগড়াছড়ির তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, জেলায় তুলা চাষ নতুন আশার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্নভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বীজ, সার ও ওষুধ দিয়ে সহায়তা করছি আমরা। দিনদিন তুলা চাষির সংখ্যা বাড়ছে। তবে বাড়ছে না তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা। এজন্য চাষিদের সর্বোচ্চ সহায়তা করা যায় না।

মাঠপর্যায়ে চাষিদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, নয় উপজেলা অফিসের বেশিরভাগ চলে একজন স্টাফ দিয়ে। পাহাড়ে তুলার খুব ভালো ফলন হয়েছে। সবাই চেষ্টা করলে খাগড়াছড়িতে প্রচুর তুলা উৎপাদন সম্ভব।