চট্টগ্রাম কারাগারে ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি বন্দি 

ধারণক্ষমতার তিনগুণ বেশি বন্দি নিয়ে ধুঁকছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। এই কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা দুই হাজার ২৪৯ জন। বুধবার (২ মার্চ) পর্যন্ত কারাগারে আছেন সাত হাজার ৩৬৬ জন। সেই সঙ্গে আছে জনবল সংকটও।

চট্টগ্রাম কারাগার সূত্র জানায়, বুধবার পর্যন্ত কারাগারে বন্দি রয়েছেন সাত হাজার ৩৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ বন্দি সাত হাজার ২৪ জন। নারী বন্দি ৩৪২ জন। তাদের মধ্যে হাজতি ছয় হাজার ৫১৮ জন ও সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি বন্দি আছেন ৮৪৮ জন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি আছেন ৮৬ জন। এর মধ্যে একজন নারীও আছেন। বিদেশি বন্দি আছেন ৩৬ জন।

কারাগারে ১২টি ভবনের ১৩৭টি ওয়ার্ড আছে। এর বাইরে ৩২টি সেল, ১০টি কনডম সেল, কারা হাসপাতালে ২৫টি ওয়ার্ড, নারীদের জন্য দুটি সেল এবং ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য আছে চারটি ওয়ার্ড।

কারাগারে যে কক্ষে ১০ জন বন্দি থাকার কথা সেখানে গাদাগাদি করে ৪০ থেকে ৪২ জনকে থাকতে হয়। এরপরও রুমে জায়গা না পেয়ে বারান্দায়ও থাকতে হয় বন্দিদের।  

এদিকে, জনবল সংকটও রয়েছে চট্টগ্রাম কারাগারে। ৪৫৯টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৩৮৯ জন। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে ৭০টি পদ। এমনকি কারা হাসপাতালে প্যাথলজিস্ট, সহকারী নারী সার্জন ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট পদ ২০০৬ সালে সৃষ্টির পর থেকে শূন্য রয়েছে।

কারা কর্মকর্তারা বলছেন, এসব পদ দুই হাজার ২৪৯ জন বন্দিকে দেখভালোর জন্য। এখন কারাগারে বন্দির সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত হাজার। শূন্য পদ পূরণের পাশাপাশি নতুন পদ সৃষ্টিরও দাবি জানিয়েছেন তারা।

চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী মামুনুল হক বলেন, জেল কোড অনুয়ায়ী প্রতি বন্দির জন্য ছয় ফুট দৈর্ঘ্য ও ছয় ফুট প্রস্থের জায়গা বরাদ্দ থাকার কথা। কিন্তু বন্দির সংখ্যা বেশি হওয়ায় এটুকু জায়গায় তিন থেকে চার জনকে থাকতে হচ্ছে। বিভিন্ন বন্দির মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে কারাগারে এসব সমস্যার কথা তাদের মুখে প্রতিনিয়তই শুনতে পাই বলে জানান এই আইনজীবী।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রাম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘কারাগারে বন্দিরা অমানবিকভাবে জীবনযাপন করছেন। কারাগার মানে শাস্তির স্থান নয়; আধুনিক সমাজে কারাগার মানে সংশোধনাগার। কারাগারে বন্দিদের মানবিক জীবনযাপন করার ব্যবস্থা করতে দিতে হবে। সরকার অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বন্দিরা যাতে কারাগারে ভালোভাবে থাকতে পারে সেজন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া প্রয়োজন।’

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘কারাগারে ধারণক্ষমতা যত আছে তত সংখ্যক বন্দির জন্য তৈরি। এর বেশি হলে সমস্যা হবে। যেমন-থাকা, খাওয়া, স্যানিটেশন সমস্যা হয়। শীতকালে থাকার সমস্যা হচ্ছে না। তবে গরমকালে সমস্যা হয়। জনবলের ক্ষেত্রে যেসব পদ শূন্য আছে, সেগুলো পূরণ হলে সমস্যা হবে না।’