মালয়েশিয়ার কথা বলে সেন্টমার্টিনে নামিয়ে দিতো তারা

কম খরচে অসহায় ও দরিদ্রদের মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে টাকা নেওয়ার পর ট্রলারে তুলতো চক্রের সদস্যরা। এরপর তিন-চার দিন সাগরে ঘোরানোর পর রাতের আঁধারে নামিয়ে দেওয়া হতো সেন্টমার্টিন দ্বীপে। এই মানব পাচার চক্রের হাতে প্রতারণার শিকার হয়েছে অসংখ্য দরিদ্র মানুষ। অবশেষে অভিযান চালিয়ে চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৭। 

রবিবার (১০ এপ্রিল) রাতে সিন্ডিকেটের মূলহোতাসহ পাঁচ সদস্যকে চট্টগ্রাাম ও কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন ভুয়া নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া এলাকার মোজাফফর আহমদের দুই ছেলে মো. ইসমাইল (৩২) ও শফিউল আলম (৩৭), কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী এলাকার সেকান্দার আলীর ছেলে রিয়াজ খান রাজু (৪১), বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া সেলবন এলাকার মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে মো. হোসেন (৬০) ও বাঁশখালীর পশ্চিম সেলবন এলাকার মৃত সৈয়দ আহমদের ছেলে মো. ইউনুছ মাঝি (৫৬)।

জয়নাল আবেদীন নামে এক ভুক্তভোগী জানান, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য গ্রেফতার রিয়াজ খান রাজুকে এক লাখ টাকা দেন। বাকি টাকা মালয়েশিয়া যাওয়ার পর পরিশোধ করার কথা ছিল। টাকা দেওয়ার ১৫ দিন পর গভীর রাতে পেকুয়া থানাধীন একটি ঘাট থেকে তাকে ট্রলারে তোলা হয়। ওই ট্রলারে রাজুর মানব পাচার চক্রের কয়েকজন সদস্য ছিল। ট্রলারে ১৫-২০ জন ভুক্তভোগী ছিলেন। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের নিয়ে তিন দিন সাগরে ঘোরানোর পর মালয়েশিয়া চলে এসেছে বলে রাতের আঁধারে ট্রলার থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নামিয়ে দেওয়া হয়। সকালে সবাই বুঝতে পারি, রাজুর হাতে প্রতারণার শিকার হয়েছি। বাড়ি এসে রাজুর কাছে টাকা ফেরত চাইলে মারধর করা হয়। সেই সঙ্গে অপহরণ করে মেরে ফেলার হুমকি দেয় রাজু।’

তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন ভুয়া নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে

আরেক ভুক্তভোগীর ভাই জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘আমার ভাই মোক্তার আলী মোজাম্বিক যায়। সেখানে গিয়ে মোক্তার অপহৃত হয়। গ্রেফতার হোসেনের ছেলে মো. এমরান মোজাম্বিকে চাঁদা আদায় করে। এমরান আমার বাবাকে বলে মোক্তারকে ফিরে পেতে সাত লাখ ৮০ হাজার টাকা দিতে হবে। ভাইকে ফিরে পেতে এমরানের বাড়িতে গিয়ে টাকা দিয়ে আসি। এরপরও মোক্তারের খোঁজ পাইনি। এ ঘটনায় হোসেন ও তার দুই ছেলে এবং আরও চার সহযোগীর বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় মামলা করি।’

র‍্যাব-৭-এর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) নুরুল আবছার বলেন, ‘মানব পাচার চক্রের মূলহোতা দুই ভাই ইসমাইল হোসেন ও শফিউল আলম। তাদের উভয়ের নামে বিভিন্ন থানায় সাতটি করে মানব পাচার আইনে মামলা আছে। তারা কক্সবাজারের পেকুয়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার নিরীহ মানুষদের স্বল্প খরচে বিদেশ পাঠানোর জন্য চুক্তি করে। চক্রটি কক্সবাজারের পেকুয়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার দরিদ্র লোকজনকে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে পাসপোর্ট তৈরি করে দেয়।’ 

তিনি বলেন, ‘টাকা নেওয়ার পর ওসব ব্যক্তিকে ট্রলারে তুলে দেওয়া হয়। এর আগে তাদের কাছ থেকে খালি স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়। ট্রলারে তোলার আগে পাসপোর্টগুলো নিয়ে যায় তারা। মালয়েশিয়া পৌঁছার পর পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হবে বলে জানায়। কিন্তু তাদের মালয়েশিয়া না নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নামিয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন এভাবে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি।’