গুমাই বিলে ধানের বাম্পার ফলন, শ্রমিক সংকটে দুশ্চিন্তায় চাষি

শস্যভান্ডার খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুমাই বিল। এই বিলে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলছে ধান কাটা। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

তারা বলছেন, ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি। প্রতিজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি দিতে হচ্ছে ১ হাজার ২শ’ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা। পাকা ধানে মাঠ ভরপুর হলেও অনেক কৃষক অপেক্ষায় আছেন শ্রমিকের মজুরি কমার জন্য। তবে ভারী বৃষ্টি হলে এসব পাকা ধানে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হতে পারে।

গুমাই বিলের আয়তন কত তা নির্দিষ্ট করে জানা না গেলেও, একদিকে রাঙ্গুনিয়ার মরিয়ম নগর অপরদিকে কাপ্তাই এবং শেষ প্রান্তে রাঙ্গামাটির নিশ্চিন্তপুর। প্রায় ২০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই বিল। জনশ্রুতি আছে, বাংলাদেশের আড়াই দিনের খাদ্য সরবারহ করা হয় এখান থেকে। এবার গুমাই বিলে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলছে ধান কাটার উৎসব।

বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিক সঙ্কটে ধান টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা

সরেজমিন দেখা গেছে, গুমাই বিলের চারদিকে এখন পাকা ধানের সমারোহ। দুই চোখ যেদিকে যায়, শুধু সোনালী ফসল। কেউ ধান কাটছে আবার কেউবা ধান মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত। মাঠে কৃষকের পাশাপাশি ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণীরাও।

সেকান্দর মিয়া নামে এক চাষি বলেন, ‘গুমাই বিলে এবার ভালো ফলন হলেও টেনশনে আছি। প্রতিজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি চাওয়া হচ্ছে এক হাজার ২শ’ টাকা থেকে এক হাজার ৪শ’ টাকা পর্যন্ত। এতে প্রতি কানি (২০ গন্ডা) জমির ধান কাটতে দিতে হবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এত মজুরি দিয়ে ধান কাটলে লোকসান হবে। এ কারণে কিছুদিন অপেক্ষা করছি, যাতে শ্রমিক বেশি আসলে দাম কিছুটা কমে।’

চাষি আইয়ুব খান বলেন, ‘বিলে ধান ভরপুর হলেও কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব শ্রমিক রাঙ্গুনিয়া এলাকায় আসছেন তাদের নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আগে এই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাজ করার জন্য শ্রমিকরা আসলেও, এবার তেমন আসেনি। এ কারণে শ্রমিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।’

কেউ ধান কাটছে আবার কেউবা ধান মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুকন বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘গুমাই বিলে এবার আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। ধান কেটে ধরে তুলছেন কৃষকরা। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা কিছুটা ধীর গতিতে হচ্ছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, ‘রাঙ্গুনিয়ায় এবার ৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। প্রতি কানিতে (২০ গণ্ডা) এবার ২৬ মণ করে ধান পাওয়া যাচ্ছে। তবে শ্রমিক সংকটে ধান কাটায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে।’

তিনি আরও জানান, ‘ধান কাটায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। ধান কাটার জন্য ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন কেনার উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এই মেশিনে এক কানি জমির ধান কাটতে ব্যয় হবে আড়াই হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকা। যেখানে শ্রমিক দিয়ে কাটতে লাগবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।’