মার্কেট-ভবনের গাড়ি সড়কে, বাড়ছে ভোগান্তি 

২০ বছর আগেও কুমিল্লা নগরীতে ছিল হাতে গোনা কয়েকটি বহুতল ভবন। তবে দিন দিন বাড়ছে শহরের জনসংখ্যা, বাড়ছে বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনের সংখ্যা। এসব ভবনের আবার বেশির ভাগেরই নেই কোনও পার্কিং ব্যবস্থা। যে কারণে ভবনের গাড়ি রাখা হয় সড়কে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, বাড়ছে নাগরিক ভোগান্তি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা নগরীর প্রায় ৯০ ভাগ বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এদিকে আরও বাণিজ্যিক ভবন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। সেগুলোরও পার্কিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না হলে নগরীতে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। 

কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নগরীর অধিকাংশ বাণিজ্যিক ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। সড়কে গাড়ি ফেলে রাখায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কিছু ভবনে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে বসানো হয়েছে দোকান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নগরীর ময়নামতি গোল্ডেন টাওয়ার, এসবি প্লাজা, ওয়াইডব্লিউসি স্কুলের বিপরীতে কিউআর টাওয়ার। 

অভিযোগ রয়েছে- কিছু মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডে গাড়ি রাখার ফি বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতা সড়কে গাড়ি রেখে শপিং ও অন্যান্য কাজ সারছেন। 

এদিকে নগরীর পুলিশ লাইন, ঝাউতলা, বাদুরতলা, কান্দিরপাড়, লাকসাম রোড, নজরুল অ্যাভিনিউ ও মনোহরপুর এলাকায় নতুন বেশকিছু বহুতল ভবন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ক্রেতারা জানান, মার্কেটের ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি থেকে লাভ করবেন। আবার মার্কেট কর্তৃপক্ষ ক্রেতা থেকে পার্কিংয়ের উচ্চমূল্যও নেবে, এটা ঠিক না। সহনীয় পর্যায়ে পার্কিং ফি নেওয়া হলে সড়কের ওপর চাপ অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন তারা।

বহুতল ভবনগুলোতে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় কান্দিরপাড়-পুলিশ লাইন্স হয়ে শাসনগাছা, কান্দিরপাড় থেকে রাণীর বাজার, কান্দিরপাড় থেকে টমছম ব্রিজ, কান্দিরপাড় থেকে রাজগঞ্জ, লিবার্টি মোড় থেকে জিলা স্কুল সড়কে বেশ যানজট সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বেশি যানজট থাকে কান্দিরপাড় থেকে রাজগঞ্জ সড়কে। এই সড়কে বাণিজ্যিক ভবন বেশি। 

নির্মাণাধীন অনেক ভবনেই কোনও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে নাএদিকে নগরীর বিভিন্ন স্থানের আবাসিক ভবনগুলোতেও পার্কিংয়েরও পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এসব ভবনের গেটে সাইনবোর্ড ঝোলানো থাকে ‘অতিথির গাড়ি বাইরে রাখুন’। এতে ভবনের বাইরে সড়কের ওপর গাড়ি রাখায় মানুষ দুর্ভোগে পড়ছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে ভবন গড়ে উঠায় নগরী তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। এত ভবন প্রয়োজন রয়েছে কিনা, তাও ভেবে দেখার প্রয়োজন। কারণ অপরিকল্পিত ভবন ব্যবসায়ী, নগরবাসী সবার জন্য দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। এদিকে অনেক মার্কেটের পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় নগরবাসী যানজটের শিকার হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সময় এবং অপচয় হচ্ছে জ্বালানির। আমরা আশা করি সিটি করপোরেশন এসব বিষয়ে দৃষ্টি দেবে এবং নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে পদক্ষেপ নেবে। 

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) কুমিল্লা শাখার সভাপতি রোকেয়া বেগম শেফালী বলেন, ভবনগুলোতে পর্যাপ্ত পার্কিং না থাকার বিষয়টি সিটি করপোরেশনের দেখা প্রয়োজন। তবে কেন তারা এ বিষয়ে পর্যাপ্ত নজরদারি না করে ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়, তা বুঝে আসে না। শিগগিরই এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে নগরী তার ভারসাম্য হারাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।  

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম বলেন, নগরীর অনেক মার্কেটের পার্কিং ব্যবস্থা নেই। কোথাও পার্কিং স্থানের কিছু দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকিগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে নতুন ভবন চালুর আগে পার্কিং নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান তিনি।