তিন রাতে পাহাড় উধাও

খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার বড়পিলাক এলাকায় তিন রাতে একটি পাহাড় কেটে সমতল করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাতের আঁধারে অবাধে পাহাড় কেটে সমতল করার কাজ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এদিকে পাহাড় কাটার বিষয়ে অনেক প্রতিবাদ হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশ কর্মীরা।

জানা যায়, গত ২৮-৩০ মে রাতে জেলার গুইমারা উপজেলার বড়পিলাক গ্রামের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন প্রধান সড়কের পাশের একটি পাহাড় কেটে সমতল করে দুর্বৃত্তরা। এ বিষয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা বিভিন্নভাবে প্রশাসনকে জানালেও অজ্ঞাত কারণে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।  

স্থানীয় বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান বলেন গুইমারা উপজেলার মৃদুল মাঝির ছেলে শুক্কুর মাঝি, বড়পিলাকের মকবুল, আবুল কালামসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন মিলে পাহাড় কেটে সমতল করে ফেলেছেন। শুধু
একটি পাহাড় নয়-এই সিন্ডিকেট গুইমারা উপজেলায় গত ৫ বছরে কমপক্ষে ৫০টি পাহাড় কেটে সমতল করে বন-পরিবেশ ধ্বংস করেছে।

গুইমারা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নুরুল আলম, স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুর রহমান, শাহীন আলম, আনোয়ার হোসেন জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার বিষয়ে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জানানো হলেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেননি। এভাবে চলতে থাকলে একসময় সব পাহাড় কেটে সমান করে ফেলা হবে। এতে জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়বে, নষ্ট হবে পরিবেশের ভারসাম্য।

খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও পরিবেশ কর্মী প্রদীপ চৌধুরী বলেন, পাহাড় কাটার পেছনে প্রভাবশালীরা জড়িত। পাহাড় কাটার ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। আর পাহাড়ের বেশিরভাগ মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এছাড়া অনেকে পাহাড়ের মাটি দিয়ে নিচু জায়গা ভরাট করে দালানকোঠা গড়ছেন। এ অবস্থায় প্রকৃত অপরাধীদের ধরা ও শাস্তি দানের পাশাপাশি পাহাড় কাটার যন্ত্রপাতি জব্দ করার দাবি জানান তিনি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শুক্কুর মাঝি ও আবুল কালাম দাবি করেন, পাহাড়টির বেশিরভাগ অংশ মহালছড়ি-সিন্ধুকছড়ি-জালিয়াপাড়া সড়ক করার সময় কাটা পড়ে। পাহাড়টির সামান্য অংশ উঁচু ছিল। ঘর করার জন্য তারা শুধু সমতল করে নিয়েছেন। 

তিন দিনে কখনও একটি পাহাড় কাটা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তারা দাবি করেন, কেউ ঘরের জন্য সামান্য মাটি সমান করলেও সাংবাদিকেরা ঝামেলা করেন। প্রশাসনের লোকজন এসে দেখে গেছে, যদি প্রকৃতই পাহাড় ধ্বংস করে ফেলা হয়-তাহলে কাউকেই প্রশাসন ছাড়তো না।

গুইমারা থানার ওসি বলেন কেউ অভিযোগ করলে দোষীদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুশার আহম্মেদ বলেন, বিষয়টা আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সাংবাদিকরা অনেক বিষয়ে খবর দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করেন, তবে অনেক সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে পুরোপুরি সত্যতা পাওয়া যায় না।

জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসন খুব কঠোর অবস্থানে আছে। গত এক বছরে জেলার ৯ উপজেলায় অনেক অভিযান হয়েছে। পাহাড় কাটার জন্য কমপক্ষে ৫০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়েছে। এস্কেভেটরসহ পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও জব্দ করা হয়েছে, মামলা হয়েছে, সাজা হয়েছে। এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে গুইমারা উপজেলার বড়পিলাকে পাহাড় কাটার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।