গ্রেফতারের আগে রাঙামাটিবাসীর কাছে বিচার চাইলেন ফজলে এলাহী

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় মঙ্গলবার (৭ জুন) সন্ধ্যায় সাংবাদিক ফজলে এলাহীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের আগে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। এতে লিখেছেন, ‌‘ফিরোজা বেগম চিনু ও তার মেয়ের মামলায় আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতার ওয়ারেন্ট দেখিয়ে থানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ....সাংবাদিকতার এই প্রতিদান??? আমার মৃত্যুর জন্য চিনু ও তার মেয়েকে দায়ী করে গেলাম...রাঙামাটিবাসী এদের বিচার করো।’

ফজলে এলাহী পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্থানীয় দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক। একই সঙ্গে তিনি দৈনিক কালের কণ্ঠ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, এনটিভি ও ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর জেলা প্রতিনিধি। 

আরও পড়ুন: ডিসি বাংলো পার্ক নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরেই গ্রেফতার ফজলে এলাহী

সহকর্মীদের অভিযোগ, ডিসি বাংলো পার্ক নিয়ে রাঙামাটির সাবেক সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু ও তার মেয়ে নাজনীন আনোয়ার নিপূণের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে হয়রানিমূলক মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সাংবাদিক ফজলে এলাহীর ফেসবুক পোস্ট

সাংবাদিক ফজলে এলাহীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ক্ষোভ জানিয়েছে বিভিন্ন মহল। অবিলম্বে তার মুক্তির দাবিতে ঢাকা ও রাঙামাটিসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

তাকে গ্রেফতারের পর রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ওসি কবির হোসেন জানান, ‘দুপুরে গ্রেফতার ওয়ারেন্ট আসার পর ফজলে এলাহীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ সকালে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।’

রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন বলেন, ‘মামলার বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানি না। আদালত থেকে একটি ওয়ারেন্টের পরিপ্রেক্ষিতে ফজলে এলাহীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

ফজলে এলাহীর স্ত্রী সেলিনা সুমি বলেন, ‘দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কলম কখনোই থামবে না। অন্যায় করে যারা ভাবে ক্ষমতা, পেশিশক্তি ও টাকার জোরে সবকিছুই সম্ভব, অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে ফেলা যায়, তাদের বিরুদ্ধে ফজলে এলাহীর কলম চলবেই। ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, এই জনপদের সব মানুষের অধিকার, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করে একজন ফজলে এলাহী লড়াই করে গেছে।’

আরও পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক ফজলে এলাহী গ্রেফতার

পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক হেফাজত উল বারী সবুজ বলেন, ‘এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার। আমরা এ জঘন্যতম ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং ফজলে এলাহীর মুক্তি চাই।’

সাংবাদিক ফজলে এলাহীকে গ্রেফতারের পরপরই রাঙামাটির কোতোয়ালি থানার উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটির গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটি, সাংবাদিক সমিতি, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি, ব্যাচ ৯৪, খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নসহ খাগড়াছড়ি-বান্দরবানের সাংবাদিকরা।

এদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় সাংবাদিক ফজলে এলাহীর মুক্তির দাবিতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে রাঙামাটির বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।