অগ্নিকাণ্ডে হাত হারানো নুরুল ১ নম্বর আসামি, হতবাক স্বজনরা

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে হাত হারানো নুরুল আক্তারকে ১ নম্বর ও শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে যাওয়া খালেদুর রহমানকে মামলার ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি জেনে হতবাক তাদের স্বজনরা। এ নিয়ে পুলিশের দায়িত্বহীনতার প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

হাত হারানো নুরুল আক্তার বিএম কনটেইনার ডিপোর উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) এবং খালেদুর রহমান ব্যবস্থাপক (প্রশাসন)। তাদেরসহ আট জনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ সিদ্দিকী।

নুরুল আক্তারের ভায়রা এ আর সোহেল বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে আহত হওয়ার পর নুরুলের এক হাত কেটে ফেলেছেন চিকিৎসকরা। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তার অবস্থা গুরুতর। তাকে ১ নম্বর আসামি করায় হতবাক হয়েছি।’ 

সোহেল বলেন, ‘শনিবার অফিস শেষ করে বাসায় চলে যান নুরুল। রাতে আগুনের খবর শুনে কর্মস্থলে ছুটে যান। আগুন নেভানোর চেষ্টায় নেমে পড়েন। হঠাৎ আগুন থেকে বিস্ফোরণে উড়ে যায় তার বাঁ হাত, ঊরু থেকে খসে পড়ে মাংস। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছি আমরা।’

আরও পড়ুন: সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড: মামলার আসামি যারা

নুরুল আক্তারের পাশে থাকা তার ভাগনে নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আমার মামা তো ডিপোর মালিক নন। তাকে কেন আসামি করা হলো? মামা ডিপোর একজন কর্মচারী মাত্র। ডিপোর সম্পদ বাঁচাতে গিয়ে এখন তিনি মৃত্যুশয্যায়। অথচ তাকে আসামি করেছে পুলিশ। এটি মানা যায় না।’

খালেদুর রহমানের জামাতা রাকিব উদ্দিন ফাহিম বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শ্বশুরের অবস্থা ভালো নয়। যেকোনো মুহূর্তে অবস্থার অবনতি হতে পারে। এ অবস্থায় মামলার আসামি করা অমানবিক। তিনি ডিপোর কর্মচারী। তাকে কেন আসামি করা হলো?। আসামি তো হওয়ার কথা মালিকপক্ষের।’

রাকিব উদ্দিন বলেন, ‘শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ব্যক্তিকে মামলার ২ নম্বর আসামি করা হলো। অথচ দুর্ঘটনার সময় তিনি ছিলেন বাসায়। অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে ছুটে গেছেন কর্মস্থলে। সহকর্মীদের নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন। আগুন নেভাতে গিয়ে শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে তার। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে তাকে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় তাকে আসামি করা পুলিশের দায়িত্বহীনতা ছাড়া কিছুই নয়।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘এটি হত্যাকাণ্ড। এটি কোনোভাবেই দায়িত্ব অবহেলায় মৃত্যু নয়। মামলায় মালিকপক্ষকে আসামি না করে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আগুন যখন লেগেছে তখন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মালিককে নিশ্চয় জানিয়েছেন। মালিকপক্ষ কি ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন সংস্থাকে ডিপোতে রাসায়নিক থাকার বিষয়টি জানিয়েছিলেন? ডিপোতে যে রাসায়নিক ছিল এগুলো সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করার মতো প্রশিক্ষিত জনবল কি রেখেছিলেন তারা? তাহলে কেন মালিকপক্ষ আসামি হবে না।’

মালিকপক্ষকে আসামি না করার বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল করিম বলেন, ‘মামলায় আট জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে ডিপো পরিচালনায় দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ আনা হয়েছে। অজ্ঞাত আরও অনেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। যদি তদন্তে হত্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে হত্যা মামলাই হবে।’

প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এরপর বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৪৬ জন। এর মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ৪৬ জনের মধ্যে ১৮টি লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। তাদের লাশের দাবিতে নমুনা দিয়েছেন স্বজনরা। হিসাবে এখনও পাঁচ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

ঘটনার চার দিন পর মঙ্গলবার রাতে মামলা করে পুলিশ। এতে আট জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তারা সবাই বিএম কনটেইনার ডিপোর কর্মকর্তা। আগুন লাগার ৮৬ ঘণ্টা পর বুধবার সকালে নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও সামরিক বাহিনী।