সীতাকুণ্ডে আগুন: সিসিটিভি ফুটেজের খোঁজে গোয়েন্দারা

সীতাকুণ্ডের বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের উৎসের সন্ধানে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা । তারা ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে এখন সিসিটিভির ফুটেজের খোঁজ করছেন। তবে ফুটেজ সরবরাহ সম্ভব না বলে জানিয়েছে ডিপোর মূল প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপ। কর্তৃপক্ষের দাবি, আগুনের উৎসের বিষয়ে তাদের কাছে কোনও তথ্য নেই। আর অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণে ডিপোর সিসিটিভি ফুটেজের কন্ট্রোল প্যানেল পুড়ে যাওয়ায় কোনও ফুটেজও সরবরাহ করা সম্ভব না। 

তবে ঘটনাটি নিয়ে বিএম ডিপোতে কাজ করেছেন এমন একাধিক কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যামেরা পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও ফুটেজ পেতে সমস্যা থাকার কথা না। অকেজো হওয়ার আগ পর্যন্ত ক্যামেরা ফুটেজগুলো কন্ট্রোল প্যানেলে কিংবা ডিভিআরে  সরবরাহ করতে থাকে। সেখানেই ফুটেজ সংরক্ষণ করা হয়। প্যানেলে কোনও সমস্যা হলে কিংবা পুড়ে গেলেও তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। 

ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল, স্বীকার মালিকপক্ষের

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গোয়েন্দা সদস্য জানান, ডিপোর চারপাশে এবং বিভিন্ন শেডে শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। এগুলোর কন্ট্রোল প্যানেল কিংবা ডিভিআর ছিল প্রতিষ্ঠানের মূল অফিস ভবনে। আগুনে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো পুড়ে গেলেও ডিপোর অফিস কক্ষে (নিরাপদ দূরত্বে) রাখা ফুটেজ সংরক্ষণ যন্ত্র (ডিভিআর) কেন পুড়বে? আগুন ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আগেই তা নিরাপদ কোনও স্থানে সরিয়ে ফেলা হলো কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।  

খাদ্য ও গার্মেন্ট পণ্য রাখার অনুমতি নিয়ে রাসায়নিক রেখেছিল বিএম ডিপো

এদিকে পুলিশের বিশেষায়িত অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের সিবিআরএন (কেমিক্যাল, বায়োলজিক্যাল, রেডিওলজিক্যাল ও নিউক্লিয়ার ইনসিডেন্ট), মানে বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতেই মূল ফোকাস। সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর মতো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণগুলো খুঁজতে আমাদের টিম কাজ করছে। আমাদের উদ্দেশ্য, লিগ্যাল এসপেক্টে এটি কতটুকু ঠিক ছিল তা বের করা।’

আগুনের সূত্রপাত কিভাবে, কি কারণেই বা দাহ্য না হওয়ার পরও হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের মতো রাসায়নিক পদার্থ জ্বলে উঠলো, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন ঘটনার তদন্তে গঠিত পাঁচ কমিটি।

অগ্নিকাণ্ডে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে ডিপোর মালিকদেরও আসামি করা হবে

আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়।

কমিটির সমন্বয়ক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ পেলে অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতাম। আমরা ডিপো কর্তৃপক্ষকে ফুটেজ সরবরাহ করতে বলেছি। কিন্তু তারা বলছেন, তাদের সিসিটিভি ফুটেজের কম্পিউটার সিস্টেম ধ্বংস হয়ে গেছে। সফটওয়্যার ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। কেননা এখন তো সিসিটিভি ফুটেজ বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সফটওয়্যারগুলো সেইভাবে তৈরি করা। ডিপোর বাইরে অবশ্যই তাদের অন্য কোথাও স্টোর থাকার কথা। কারণ এত বড় একটা প্রতিষ্ঠান, শুধুমাত্র ওখানের সার্ভার নষ্ট হলে ফুটেজ চলে যাবে, এটা যৌক্তিক কোনও উত্তর হতে পারে না।’

অগ্নিকাণ্ডে হাত হারানো নুরুল ১ নম্বর আসামি, হতবাক স্বজনরা

সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নুরুল আলম দুলাল ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, ‘রাত ৯টা ৫০ মিনিটে আমাদের কাছে ডিপোতে আগুন লাগার খবর আসে। ফোন পেয়ে আগুনের উৎসের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কর্তৃপক্ষ কোনও উত্তর দেয়নি। আমরা এখনও জানতে পারিনি ওই দিনের আগুনের উৎস কি ছিল। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগ এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রকৃত তথ্য না দেওয়ার বিষয়টি বড় অপরাধ।’

সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, ‘কিভাবে আগুনের সুত্রপাত তা এখনও জানতে পারিনি। তবে আগুনের উৎস সন্ধানে ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করছি আলামতগুলো বিশ্লেষণ করে আগুনের উৎস বিষয়ে জানা যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় ডিপোর আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফ সিদ্দিকী। এখন আগুন নিভেছে। এসব বিষয়ে তথ্য নেওয়া হবে। তবে যতদূর জানতে পেরেছি ডিপোর মাঝখানের একটি শেডের পাশের দ্বিতল ভবনে কন্ট্রোল প্যানেল ছিল। সেটি নাকি আগুন ও বিস্ফোরণে নষ্ট হয়ে গেছে।’ 

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, ‘আগুনের উৎস সন্ধান এবং অন্য বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে তদন্ত দল। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো কিছুই বলা যাবে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএম কনটেইনার ডিপোর অন্যতম প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের জিএম ও মুখপাত্র শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, ‘আগুনের উৎসের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই। কারণ ডিপোতে যে সিসিটিভি ফুটেজের কন্ট্রোল প্যানেল ছিল তা পুড়ে গেছে। কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত প্রত্যক্ষ করেছে এমন কাউকেও আমরা খুঁজে পাইনি।’ তবে আগুনের সূত্রপাত জানতে চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।