ত্রাণের জন্য হাহাকার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে বিজয়নগর উপজেলার অন্তত দশটি গ্রাম ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসল, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। রাস্তা-ঘাট ও বাড়িঘর ডুবে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। বন্যাদুর্গতরা এখনও কোনও ত্রাণ সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এখন পর্যন্ত জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তিতাস নদীর পূর্বাঞ্চলের বিজয়নগর উপজেলার দত্ত খোলা, চর ইসলামপুর, মনিপুর, পত্তন, লক্ষিমোড়া, চান্দুরা ও কালিসিমাসহ অন্তত ১০টি গ্রাম ডুবে গেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এমন দুর্ভোগের মধ্যে থাকলেও দুর্গত এলাকায় কোনও সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা পৌঁছায়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ।

মনিপুর এলাকার নায়েব মিয়া বলেন, ‘গরু আছে কয়েকটা, ঘরে বাচ্চা আছে। তাদের নিয়ে বেশি সমস্যায় আছি। গরু রাখার কোনও জায়গা নেই। রান্নাঘর, টিউবওয়েল ও বাথরুম তলিয়ে গেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে আমাদের বাড়িছাড়া হতে হবে।’

পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ

চান্দুরা ইউনিয়নের কালিসীমা গ্রামের জয়নাল ইসলাম বলেন, ‘বাড়িঘর ডুবে যাচ্ছে। পুুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এখন পর্যন্ত আমাদের কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা এসে কত কথা বলে, এখন কেউ আমাদের পাশে নেই।’

একই এলাকার আমেনা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন পানি বাড়ছে। বাড়ির উঠানে কোমর সমান পানি। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। নামাজ পড়তে পারি না, বাথরুমে যেতে পারি না, রান্না করতেও পারি না। সব জায়গায় শুধু পানি আর পানি। ঘরের ভেতরে কোনোরকমে রান্না করে খেয়ে বেঁচে আছি। এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যান কেউ কোনও খোঁজ নেয়নি।’

চান্দুরা ইউনিয়নের এম এম সামিউল হক চৌধুরী বলেন, ‘আজকে দুপুরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। কতজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার হিসাব করছেন। তবে এলাকায় এখনও সরকারি-বেসরকারি কোনও ত্রাণ আসেনি।’

রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর ডুবে গেছে

চর ইসলামপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. দানামিয়া ভুইয়া বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার এলাকায় সরকারি বেসরকারি কোনও ত্রাণ পৌঁছায়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে। আমার এলাকায় এখনও কোনও ত্রাণ সহায়তা আসেনি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ ইফরান উদ্দিন আহমেদ জানান, খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার (২১ জুন) সভা করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এলাকা ঘুরে দেখবেন। দুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে।