আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ নেই সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মুখে। গেলো বছরের অক্টোরের শুরুতে টানা বর্ষণ ও মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যায় আমন ধান, সবজিসহ মাছের খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে নিঃস্ব হয়ে গেছেন স্থানীয় কৃষকরা। অর্থাভাবে পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদে কেনাকাটা করতে পারছেন না তারা। সরকারি সহায়তাও পাননি বলে অভিযোগ তাদের।
মেঘালয়ের সীমান্তঘেঁষা উপজেলা ধোবাউড়ার কালিকাবাড়ি গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী (৬৫)। গেলো বছরের অক্টোবরের ভয়াবহ বন্যায় দুই একর ফসলি জমির আমন ধান, সবজিসহ মাছের খামার তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন তিনি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘর এখনও ঠিকঠাক করতে পারেননি। অর্থাভাবে আসন্ন ঈদে স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি-নাতনিদের জন্য কোনও কেনাকাটাও করতে পারেননি।
ঈদে তাদের কোনও আনন্দ নেই দাবি করে ইউনুস আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হঠাৎ ভারী বৃষ্টি এবং মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যা হয়। বন্যায় দুই একর জমির আমন ধান, বাড়ির পাশের উঁচু জায়গার সবজিক্ষেত এবং মাছের খামার তলিয়ে যায়। প্রায় ১৫ দিনের মতো পানির নিচে তলিয়ে থাকে। এর ফলে আমন ধান ও সবজি সমস্তটাই নষ্ট হয়ে গেছে। পাশের খামার তলিয়ে গিয়ে সমস্ত মাছ বের হয়ে গেছে। এর ফলে আমার পরিবার ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়ে। এই ক্ষতি এখনও পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে ধারকর্জ করে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির কারণে রমজান মাসে ভালোমন্দ কোনও বাজার করতে পারি নাই। কোনোমতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে রোজা রাখছি। এখন ঈদ এসেছে। অর্থাভাবে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ছেলের বউ এবং নাতি-নাতনিদের জন্য এখনও কোন কেনাকাটা করতে পারি নাই। ভালোমন্দ কোন বাজারও করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আমার পরিবারে ঈদে কোনও আনন্দ নাই।’
তিনি আরও জানান, বন্যায় ক্ষতির পর প্রথম দিকে কিছু ত্রাণ সহায়তা পেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে কোনও সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না।
শুধু ইউনুস আলীর পরিবারেই না, সীমান্তবর্তী ধোবাউরা উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারের একই অবস্থা।
ঘোষগাঁও গ্রামের গৃহবধূ করিমুন্নেছা বলেন, ‘বন্যায় এমন ক্ষতি করেছে ঘরে কোনও খাদ্যের ব্যবস্থা নাই। খুব কষ্টে অর্থাভাবে আমাদের রোজাগুলো পার করতে হচ্ছে। ঈদে ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন জামা কাপড় কেনাকাটা করা সম্ভব হয়নি। অর্থের অভাবে চিনির সেমাইসহ অন্যান্য বাজার করা যায়নি। ঈদের আনন্দ আমাদের ছেলেমেয়েসহ পরিবারের কারও মধ্যে নেই।’
একই গ্রামের কৃষক জহিরুল বলেন, ‘বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সুদে ধারকর্জ করে বোরো ধানের আবাদ করেছি। ঈদে কেনাকাটার জন্য কোনও অর্থ ঘরে নাই। শুধু আমি না এই এলাকার সবারই একই অবস্থা।’
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে সরকারি সহায়তার আওতায় আনা যায়নি এই বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন সমাজের বিত্তবানদের অসহায় মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা গেলে আসন্ন ঈদে তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠবে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।