৪ দিন পর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাকা ঘরে ওঠার কথা ছিল নিজামের

একমাস আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরেন নিজাম উদ্দীন। আট বছরের প্রবাস জীবনের সবটুকু সম্বল দিয়ে দুই হাজার ২০০ স্কয়ার ফিটের পাকা বাড়ি বানান। কাঁচা ঘর ছেড়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আগামী শুক্রবার সেই নতুন ঘরে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু চার দিন আগেই সব শেষ হয়ে গেলো।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে ঝড়ো বাতাসে ঘরের ওপর গাছ পড়ে স্ত্রী সাথি আক্তার ও মেয়ে লিজা আক্তারসহ (৪) মারা গেছেন নিজাম উদ্দীন। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়নের হেসাখাল পশ্চিম পাড়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিজাম উদ্দীনের ভাতিজা আবদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাকা মাত্র একমাস আগেই দেশে ফিরেছেন। আট বছর মালয়েশিয়া ছিলেন তিনি। এর মাঝে দুই বার বাড়ি এসেছেন। কিন্তু আর্থিক সমস্যা আর তার বাবার অসুস্থতার কারণে বাড়িঘর করতে পারেননি। এবার পাকা ঘরের কাজ ধরেছিলেন। মাত্র সাত দিন পর কাজ শেষ হয়ে যেতো। আর চার দিনের মধ্যে ভেতরের একটা রুমে ওঠার কথা ছিল তার। তাই রুমও ঠিক করেছেন। নতুন ঘরে ওঠার সব প্রস্তুতিও নিয়েছেন। কিন্তু গতরাতে সব শেষ হয়ে গেছে।’

ঘরের ওপর গাছ পড়ে স্ত্রী সাথি আক্তার ও মেয়ে লিজা আক্তারসহ মারা গেছেন নিজাম উদ্দীন

প্রতিবেশীরা জানান, নিজাম উদ্দীনের বাবা আবদুর রশিদ অসুস্থ। তিনি উঠতে বসতে পারেন না। নিজামের ইচ্ছা ছিল, পাকা ঘরে মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে পাকা ঘরে উঠবেন। কিন্তু তার আর পারলেন না। 

নিজাম উদ্দীনের প্রতিবেশী কামরুজ্জামান বলেন, ‌‘এভাবে একটি পরিবার শেষ হয়ে যাওয়ায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পুরো এলাকায় শোকের মাতম।’

মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. ইকবাল বাহার মজুমদার বলেন, ‘গতকাল বিকালেও নিজামের সাথে কথা হয়েছিল। রাতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মারা গেলো। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আট বছর বিদেশে থেকে যা কিছু একটা করলো, তাও ভোগ করতে পারলো না। আমাকে বলেছিল, বাড়ির কাজ শেষ হলেই উঠে যাবে। তাই ভেতরে দুটি রুম ঠিকঠাক করছিলো। আগামী শুক্রবারে ওঠার কথা ছিল। যার এত স্বপ্ন ছিল তার পরিবারকে মাত্র কবর দিয়ে আসলাম।’

এক পরিবারের তিন জনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু নিজাম উদ্দীনের নয়, আরও অনেকের বাড়িতেই গাছ পড়েছে। তবে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অনেক রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গেছে। এগুলোর উদ্ধার কাজ চলছে।’

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান মেহবুব বলেন, ‘একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যুর ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তিন জনের দাফনের জন্য ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি। তাদের পরিবারের জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’