দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তিতে প্রার্থনা শুরু

রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার (১৬ নভেম্বর) পুণ্যার্থীদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এটি উদ্বোধন করা হয়। 

উপজেলার জুরাছড়ি ইউনিয়নের সুবলং শাখা বনবিহারে ১২৬ ফুট দৈর্ঘ্যের ‘সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তি’ নির্মাণ করা হয়েছে। সুবলং শাখা বনবিহারে উদ্যোগে এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। মূর্তিটি সাধারণ মানুষের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে বিহার কর্তৃপক্ষ।

বিহার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাড়ে ১২ একর জায়গাজুড়ে গঠিত সুবলং শাখা বনবিহার। পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পরমপূজ্য বনভন্তের স্মৃতি স্মারক হিসেবে জুরাছড়ি উপজেলার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং এই উপজেলা হতে ভিক্ষু হওয়া ভিক্ষুরা (বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু) দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম ও দীর্ঘতম সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তি নির্মাণের উদ্যোগ নেন ২০১২ সালে। এরপর ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে মূর্তিটি নির্মাণ শুরু হয়। নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২১ সালের শেষ দিকে।

বিহার সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বুদ্ধমূর্তির স্থপতি ছিলেন বিশ্বজিৎ বড়ুয়া, প্রতিপদ দেওয়ান ও দয়াল চন্দ্র চাকমা। প্রকৌশলী ছিলেন তৃপ্তি শংকর চাকমা এবং অঙ্কনের দায়িত্বে ছিলেন বিমলানন্দ স্থবির। বিহারে নির্মিত বুদ্ধমূর্তির নিরাপত্তা প্রত্যহ বিহারের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক ও বিহারের আশপাশের এলাকা ক্লোজডসার্কিট (সিসি) ক্যামেরা হয়েছে। মূর্তিটি বিহারে নির্মিত হলেও সাধারণ জনসাধারণের জন্য এটি পরিদর্শন উন্মুক্ত থাকবে।

১২৬ ফুট দৈর্ঘ্যের বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা

জুরাছড়ির বাসিন্দা ত্রিনয়ন চাকমা জানান, জুরাছড়ির হাজার হাজার মানুষ দূর-দূরান্তের ঝিরি থেকে পাথর এনেছেন। এরপর স্থানীয়ভাবে অর্থ উত্তোলন শুরু হয়। ধর্মপ্রাণ মানুষের দেওয়া অর্থেই এই কাজটি করা হয়েছে। জুরাছড়ির মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত উপাসক-উপাসিকা, দায়ক-দায়িকাগণ বুদ্ধমূর্তি নির্মাণে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।

সুবলং শাখা বনবিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ধল কুমার চাকমা বলেন, ‘বনভন্তের স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয়রা নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করেছেন। এতে কোনও প্রকার সরকারি সহায়তা ছিল না।’

জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা জানান, জুরাছড়ির সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তিটি দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি। এখানকার যারা বাসিন্দা ও এছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে ধর্মপ্রাণ বিশিষ্টজনেরা আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।

রাঙামাটির জেলা পরিষদ সদস্য প্রবর্তক চাকমা বলেন, ‘জুরাছড়ির মানুষ শ্রদ্ধেয় বনভন্তের স্মৃতি স্মরণেই এই বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ করেছেন। দেশের সবচেয়ে বড় ১২৬ ফুট দীর্ঘতম বুদ্ধমূর্তি দেখতে দুর্গম জুরাছড়িতে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেক লোক আসবে। প্রচুর পর্যটক আসবে, যার ফলে স্থানীয়ভাবে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।’