কান্না থামছে না ছাত্রদল নেতা নয়নের স্বজনদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়া (২২) নিহতের পর থেকে পরিবারে শোকের মাতম চলছে। স্বামীকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছেন সানজিদা আক্তার। এ ঘটনায় বিচার দাবি করেছেন নয়নের বাবা-মা ও বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নয়ন। তিনি ওই ইউনিয়নের চরশিবপুর গ্রামের রহমত উল্লাহর ছেলে। তার দুই বছর বয়সী একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। 

রবিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে চরশিবপুরে নয়নের বাড়িতে দেখা যায়, শাশুড়ির পাশে কাঁদছেন তার স্ত্রী সানজিদা আক্তার। একটু পর পর মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে স্বামী হত্যার বিচার দাবি করেন সানজিদা।

নয়নের বাবা রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আগামী ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় বিএনপির গণসমাবেশ হবে। এই উপলক্ষে গতকাল বিকালে বাঞ্ছারামপুর সদরে বিএনপি নেতাকর্মীরা উপজেলা সদরের বিভিন্ন জায়গায় মিছিলসহ লিফলেট বিতরণ করছিলেন। আমাদের বড় ছেলে নয়নকে দলের নেতাকর্মীরা বাড়ি থেকে বাঞ্ছারামপুর সদরে নিয়ে যান। সেখানে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে পুলিশের ছোড়া গুলিতে আমার ছেলে মারা গেছে। আমি রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তান হত্যার বিচার চাই।’

নয়ন নিহতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা

কামাল হোসেন নামে নয়নের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বিনা উসকানিতে গুলি করে নয়নকে হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

এদিকে ছাত্রদল নেতা নয়ন নিহতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। রবিবার বেলা ১১টার দিকে জেলা ছাত্রদলের উদ্যোগে শহরের শিমরাইলকান্দি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি কান্দিপাড়া থেকে বের হয়ে কালীবাড়ি মোডে আসার পর পুলিশ বাধা দেয়। পরে পুলিশি বাধায় মিছিলটি কালীবাড়ি মোড়েই শেষ হয়। এ সময় জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রুবেল চৌধুরী ফুজায়েল ও সদস্য সচিব মহসিন মিয়া হৃদয় পুলিশের গুলিতে নয়ন নিহতের ঘটনায় নিন্দা জানান। সেই সঙ্গে ‘হত্যাকাণ্ডের বিচার রাজপথেই হবে’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, কুমিল্লায় বিএনপির মহাসমাবেশ আগামী ২৬ নভেম্বর। সমাবেশকে কেন্দ্র করে শনিবার বিকালে বিএনপি নেতা ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি ড. মো. সাইদুজ্জামান কামাল হোসেনের নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরে লিফলেট বিতরণ করছিলেন।

এ সময় বাঞ্ছারামপুর থানার পুলিশ সেখানে গেলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়। তখন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন নেতাকর্মীরা। পুলিশ তখন শর্টগানের গুলি ছুড়লে এতে বিদ্ধ হন নয়ন। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। আজ সন্ধ্যায় নয়নের লাশ গ্রামের বাড়িতে আনার কথা রয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও মামলা করা হয়নি।