‘সব দেশে ঈদ ও পূজায় পণ্যের দাম কমে, আমাদের দেশে বাড়ে’

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশের সমৃদ্ধির সঙ্গে যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সমৃদ্ধি আসছে, সেটি অব্যাহত রাখতে হলে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অব্যাহতভাবে যদি দেশ পরিচালনা করতে পারেন, তাহলে আমাদের দেশ স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে পারবে। অন্যথায় দেশ স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে পারবে না।’

ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশে যখন ঈদ, পূজা ও উৎসব হয়, তখন পণ্যের দাম কমে। অথচ আমাদের দেশে যখন উৎসব হয়, তখন পণ্যের দাম বাড়ে। যখন আমাদের কোনও উৎসব হবে, সেটি ঈদ-রোজা-পূজা যেটিই হোক, তখন যেন পণ্যের দাম কমে, এই অনুরোধ করছি ব্যবসায়ীদের।’

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ৩০তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

বিএনপি যদি আবারও সুযোগ পায়, দেশটাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজ দেশ সমৃদ্ধ হচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে সমৃদ্ধি আসছে, ব্যবসায়ীরা এখন বিদেশে বিনিয়োগ করছেন, এটি শেখ হাসিনা না হলে হতো না। এখানে যদি আবার অন্য সরকার আসে, এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৩-১৪ সালে যখন সারা দেশে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল মানুষের ওপর, তখন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মুরগি ও গরু-ছাগলের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এর কারণ হচ্ছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুট হচ্ছে ইকোনমিক লাইফলাইন, সেটাকে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তখন আমাদের সরকার সর্বোচ্চ প্রোটেকশন দিয়ে রফতানিসহ সবকিছু চালু রেখেছিল।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও এগিয়ে যাওয়া নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব প্রশংসা করেন, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রশংসা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে যে বার্তা পাঠিয়েছেন, সেখানে উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন। আজ সমগ্র বিশ্ব প্রশংসা করছে আমাদের। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের একটি বিরোধী দল বিএনপি ও তার দোসররা প্রশংসা করতে পারে না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ও তাদের দোসররা পদ্মা সেতু দিয়ে ওপারে গিয়ে জনসভা করে বলেন, দেশে কোনও উন্নয়ন হয়নি। অথচ তারা পদ্মা সেতুর ওপর দিয়েই গেলেন। ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে গিয়ে বলেন, কিছুই হয়নি। যাদের চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির, তাদের কেউ আলোও দিতে পারবে না, শ্রবণশক্তিও দিতে পারবে না। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আল্লাহ তাদের হেদায়েত করুন।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৪ বছর বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করেছেন এবং সব ব্যবসায়ীর সমৃদ্ধি হয়েছে। দেশের সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক ব্যবসায়ীর সমৃদ্ধি এসেছে। আপনারা যদি নিজের কাছে প্রশ্ন করেন, ১৪ বছর আগে আপনার ব্যবসার কী ব্যাপ্তি ছিল, এখন ব্যাপ্তি কোথায়, তাহলে বুঝতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘যারা পণ্য মজুত করবে, তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এফবিসিসিআই ও বণিক সমিতি যদি ব্যবসায়ীদের ডেকে বলেন, যারা পণ্যের দাম কমাবেন, তাদের ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে উৎসাহ দেওয়া হবে। প্রয়োজনে পুরস্কৃত করা যেতে পারে। তাহলে আমাদের দেশে সেই সংস্কৃতিটা চালু হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের জিডিপির আকার ছিল ৮০ বিলিয়ন ডলার। আজ সেটি পৌনে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মাথাপিছু আয় ছিল ৬০০ ডলার, সেটি ২৮০০ ডলারের ওপরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে ২০২১ সালে আইএমএফের প্রাক্কলন অনুযায়ী, আমরা মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়েছি। মানব উন্নয়ন সূচক, অর্থনৈতিক সূচক, সামাজিক সূচক ও স্বাস্থ্য সূচকসহ সব সূচকে অন্তত সাত বছর আগে আমরা পাকিস্তানকে অতিক্রম করেছি। মানব উন্নয়ন সূচক, সামাজিক সূচক এবং স্বাস্থ্য সূচকে আমরা ভারতকেও অতিক্রম করেছি। অর্থনৈতিক সূচকে মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে ২০২১ সালে আমরা ভারতকে অতিক্রম করেছি।’

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এমএ লতিফ এমপি, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, বাণিজ্য মেলা কমিটির চেয়ারম্যান একেএম আক্তার হোসেন।