চাঁদপুরে মৎস্য জাদুঘর, আছে ৩০০ প্রজাতির মাছ

চাঁদপুরে মাছের জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৩০০ প্রজাতির মাছ। রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় এবং বিরল প্রজাতির বেশ কিছু মাছ। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (নদী কেন্দ্র) গবেষণা কাজের অংশ হিসেবে গড়ে উঠা জাদুঘরটি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা আসেন। জাদুঘরটি সবার জন্য উন্মুক্ত। এটিকে আরও বড় পরিসরে করার দাবি জানিয়েছেন দর্শনার্থীরা।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সংশ্লিষ্টরা জানান, শত শত বছর ধরে মৎস্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে পদ্মা-মেঘনা নদীবেষ্টিত চাঁদপুর। জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজননের সবচেয়ে বড় অভয়াশ্রম এ জেলাতেই। এ কারণে ইলিশ ও অন্যান্য মৎস্য সম্পদ নিয়ে গবেষণার জন্য ১৯৮৪ সালে চাঁদপুর শহরে স্থাপন করা হয় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। তখন থেকেই গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা সাগর ও দেশের বিভিন্ন নদী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করে গবেষণা করছেন। গবেষণা শেষে মাছগুলো মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। বর্তমানে মিউজিয়ামটিতে ৩ শতাধিক প্রজাতির মাছ কেমিক্যাল দিয়ে ছোট-বড় জারে সংরক্ষিত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিলুপ্ত প্রায় মহাশোল মাছ, বিরল প্রজাতির জইয়া মাছ, রানি, চিতল, গারুয়া, তারা বাইম, মধু পাবদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এছাড়া সমুদ্রের হাঙর মাছ, ঝিনুক, বামশ মাছ, ইলিশ ও মাছের ডিমও স্থান পেয়েছে এ জাদুঘরে।

দর্শনার্থীরা বলছেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাঁদপুরের রূপালি ইলিশের সুখ্যাতি রয়েছে। এখানকার নদীতে অসংখ্য প্রজাতির মাছ আছে যা মৎস্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এখানে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জেলে ও মৎস্যজীবীরা মাছ নিয়ে আসেন এবং বিক্রি করেন। এসব নানা কারণে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এখানে স্থাপন করা হয়। এই ইনস্টিটিউটেই রয়েছে মাছের জাদুঘরটি। তবে একটি মাত্র কক্ষে মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। 

জাদুঘরটি এক রকম গুরুত্বহীনভাবে রয়েছে। এটিকে আরও বড় পরিসরে সমৃদ্ধ করার দাবি জানান দর্শনার্থীরা।

সংরক্ষণ করা মাছ

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সমুদ্র, অভ্যন্তরীণ জলাশয়, নদী ও বিলের মাছ মিউজিয়ামে রেখেছি। ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই জাদুঘরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রাখা হয়েছে। এখানের কিছু মাছ মানুষের কাছে পরিচিত এবং কিছু অপরিচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমরা গবেষণার কাজে মাছ সংগ্রহ করি। এর মধ্যে যে মাছগুলো মারা যায় সেগুলো সংরক্ষণ করছি। এখানে এমন মাছ আছে যেটি প্রকৃতি থেকে বিলীন হয়ে গেছে। কিছু মাছ আছে যেগুলো আগে নদী-সাগর এলাকায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত, কিন্তু বর্তমানে কমে গেছে। আবার নতুন প্রজাতির মাছও আছে।’

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যখন স্যাম্পলিংয়ে যাই সেগুলোর কাজ শেষে মাছগুলো মিউজিয়ামে সংরক্ষণের চেষ্টা করি। ভবিষ্যতে যারা গবেষণা করবে তাদের জন্য এটি তথ্যভাণ্ডারের মতো কাজ করবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে আসছেন। কয়েকদিন আগেও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা এবং ফেনি কলেজের শিক্ষার্থীরা এসেছিলেন। মিউজিয়ামটি সবার জন্য উন্মুক্ত।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে গবেষণার কাজে ল্যাবসহ অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। জাদুঘরটি মূলত তার মধ্যেই একটি। এটি আলাদা কিছু না। এ পর্যন্ত ৩০০ প্রজাতির মাছ মিউজিয়ামটিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। মিউজিয়াম সমৃদ্ধ করার সুযোগ অবশ্যই আছে। এটির উন্নয়নে যা করণীয় আমরা তা করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মোট পাঁচটি স্টেশন এবং পাঁচটি সাবস্টেশনে অফিসের একটি অংশ হিসেবে জাদুঘর করা আছে।’