টানা বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পাহাড় ধসের আশঙ্কা

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে বান্দরবানে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের আশঙ্কা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ধসে পড়েছে পাহাড়ের মাটি। এখনও বড় ধরনের কোনও দুর্ঘটনা না ঘটলেও, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধসে যেকোনও সময় ঘটতে পারে প্রাণহানির ঘটনা।

ভারী বর্ষণের কারণে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। এদিকে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাসকারী ও নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করে সতর্ক ও নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

স্থানীয়রা জানান, বান্দরবানে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে লক্ষাধিক মানুষ। জেলার লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা থানচি, রোয়াংছড়ি ও সদরসহ প্রত্যেক উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে এসব মানুষ। ভৌগোলিক অবস্থান গত কারণে পার্বত্য এলাকায় পর্যাপ্ত সমতল ভূমি না থাকায় দরিদ্র অসহায় মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন করে। তবে শীত ও শুষ্ক মৌসুমে তেমন একটা ঝুঁকি না থাকলেও বর্ষাকালে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমি ক্ষয় হয়ে দেখা দেয় পাহাড় ধস। গত কয়েক দিন ধরে টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকায় দেখা দিয়েছে এ পাহাড় ধসের আশঙ্কা।

এদিকে ভারী বর্ষণে শহরের ইসলামপুর, কালাঘাটা, বালাঘাটা, আর্মিপাড়াসহ নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে। তাই পাহাড়ের পাদদেশে ও নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শহরে মাইকিং করছে প্রশাসন। কিন্তু ঝুঁকি জেনেও নিজেদের বসতভিটা ছেড়ে যেতে চায় না অনেকে।

বান্দরবানের কালাঘাটার বাসিন্দা মো. হারুন বলেন, আর কোনও জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়েই পাহাড়ের পাদদেশে পরিবার নিয়ে বাস করতে হচ্ছে। নিজ বাসা ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে মন চায় না।

বালাঘাটার আবদুর রহিম বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ের ওপরের শক্ত আবরণ নষ্ট হয়ে যায়। বর্ষাকালে এসব পাহাড়ে পানি পড়লে মাটি নরম হয়ে ধসে পড়ে। প্রশাসন তৎপর থাকলে পাহাড় ধস কমাতে পারে।

ইসলামপুরের রহিমা বলেন, তার বাড়ি অনেক নিচু জায়গায় হওয়াতে কিছুক্ষণ ভারী বর্ষণ হলেই বাড়িটি ডুবে যায়। প্রতিবছরই কয়েকবার বাড়িটি ডুবে যায়। আর কোথাও চলে যাবে বাড়ি ছেড়ে এ সুযোগও নেই তার।

ইসলামপুরের জসিম উদ্দিন বলেন, আমার একমাত্র বাড়িটি এখন পানির নিচে। এ বছর তেমন বৃষ্টি হবে না মনে করেছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের পরিবারের সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসতে হলো। কতদিন থাকতে হবে জানি না।

বান্দরবান ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নাজমুল আলম জানান, যেকোনও ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে দমকল বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত আছেন।

এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, বান্দরবান জেলায় মোট ১৯২টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবান সদরেই রয়েছে ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ও নিম্নাঞ্চল থেকে যারা এসব আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিবে তাদের খাবারসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। এ ছাড়া তাদের চিকিৎসার জন্য সব সময় মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে।