রাঙামাটিতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি, দুর্গত মানুষের পাশে সেনাবাহিনী

রাঙামাটির বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমায় প্লাবিত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে এখনও জেলার দুর্গম বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে আছে। পাশাপাশি কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে সদর উপজেলার বড়াদম এলাকার দেড় শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর তলিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনী।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সকালে বড়াদম এলাকায় সেনাবাহিনীর ১০ আরই ব্যাটালিয়নের জীবতলী জোন ত্রাণ সহায়তা নিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ায়। দুর্গতদের হাতে ত্রাণ সহায়তা তুলে দেন ১০ আরই ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ সোহেল।

এ সময় ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মো. তাওহীদ আমিন, ১০ আরই ব্যাটালিয়নের কোম্পানি উপ-অধিনায়ক মো. এনামুলক সাকিবসহ অন্যান্য সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ত্রাণ সহায়তার মধ্যে রয়েছে চাল, চিনি, ডাল, তেল, লবণ, আলু, বিস্কুট, স্যালাইন ও অন্যান শুকনো খাবার।

বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনী

এদিকে, গতকাল বুধবার বিকাল থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল থেকে পানি কমতে শুরু করলেও এখনও বাড়ি ফেরার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এসব এলাকার বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন।

বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘আমার ৪০ বছরের জীবনে এমন পাহাড়ি ঢল দেখিনি। সবার বাড়িঘর ও দোকানপাট তলিয়ে গেছে। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে।’

বাঘাইছড়ির আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘পানি কিছুটা কমলেও বাড়ি ফেরার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এখনও বাড়িঘরের ভেতরে পানি। এই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবো বুঝতে পারছি না।’

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, ‘ওসব এলাকায় পানি কমলেও আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজনের বাড়ি ফেরার মতো পরিস্থিতি নেই। তবে বৃষ্টি আর না হলে পানি নেমে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্যায় এক শিশু পানিতে পড়ে নিখোঁজ আছে। আজ সাজেকের মাচালং এলাকা থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি কীভাবে মারা গেলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বন্যায় আউশ, আমন, আদা ও হলুদসহ প্রায় তিন হাজার ৩৮ হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি না কমলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

সদর উপজেলার বড়াদম এলাকার দেড় শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর তলিয়ে গিয়েছিল

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী বন্যায় ১০ উপজেলায় তিন হাজার ৩৮ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এটি চূড়ান্ত তালিকা নয়। পানি কমলে চূড়ান্ত তালিকা করা হবে।’

রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় ২৮টি ইউনিয়ন ও বাঘাইছড়ি পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছিল। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ১০০ জন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। বৃষ্টি না হওয়ায় কিছু এলাকার পানি নামতে শুরু করেছে। বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।’