কক্সবাজারের উখিয়ায় জালিয়াপালং ইউনিয়নে র্যাবের টহল দলের ওপর হামলার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের নেতারা। এর প্রতিবাদে কক্সবাজারে বুধবার (০৮ নভেম্বর) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি।
মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া জাগির হোসেন (৩৭) জালিয়াপালং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি পাইন্নাশিয়া গ্রামের মৃত মো. আলমের ছেলে।
একই ঘটনায় বিএনপির ৪২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে র্যাব। নিহত জাগির হোসেন উখিয়া থানায় র্যাবের করা মামলায় ১৪ নম্বর আসামি। উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ চৌধুরীকে মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়। র্যাব বাদী হয়ে মঙ্গলবার সকালে উখিয়া থানায় এ মামলা করে। মামলার এজাহারে সংখ্যা উল্লেখ না করে অজ্ঞাত অনেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
তবে র্যাব ও পুলিশ জানিয়েছে, গুলিতে আহত কারও মৃত্যুর বিষয়ে তাদের কাছে কোনও তথ্য নেই। রবিবার রাতে র্যাবের টহল দলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে ৪২ জনের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় একটি মামলা করেছে। মামলায় বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্না স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘গত ৫ নভেম্বর রাতে উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় ঢুকে ভাঙচুর করে গুলি চালায় র্যাব, পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী নেতাকর্মীরা। এতে বিএনপি তিন নেতাকর্মী আহত হন। এর মধ্যে বিএনপি নেতা জাগির হোসেন মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বিচারে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যার প্রতিবাদে কক্সবাজারে বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা করা হলো।’
জেলা বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘কক্সবাজার জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই জন। এছাড়া ২৮ অক্টোবরের পর বিভিন্ন থানায় মামলা দিয়ে বিএনপির ৫৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিএনপি নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে কক্সবাজারে বুধবার হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে।’
জাগির হোসেনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ভাতিজা শিহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘হামলার সময় চাচার পেটে গুলি লাগে। এরপর তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। মরদেহ বাড়িতে আনা হয়েছে। জানাজা শেষে দাফন করা হবে।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত রবিবার মধ্যরাতে র্যারের টহল দল নাশকতা মামলার আসামি বিএনপি নেতা সুলতান মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্যদের ধরতে জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাইন্নাশিয়া গ্রামে গেলে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী-সমর্থক লাঠিসোঁটা নিয়ে র্যাবকে ঘিরে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ইট-পাটকেলের আঘাতে র্যাবের একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হন জাগির হোসেনসহ তিন জন।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গুলিতে কেউ হতাহত হয়েছে কিনা, জানি না। তবে রবিবার রাতে র্যাবের একটি টহল দলের ওপর উখিয়ার পাইন্নাশিয়া গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল পুলিশ। এ ঘটনায় র্যাব ৪২ জনের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মঙ্গলবার সকালে মামলা করেছে। যে মারা গেছে, তার বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।’
র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এএইচ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘গত রবিবার রাতে পাইন্নাশিয়া গ্রামে র্যাবের টহল দলের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে র্যাবের কয়েকজন সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় র্যাবের এক সদস্য বাদী হয়ে উখিয়া থানায় মামলা করেন। কিন্তু ঘটনার সময় স্থানীয় কেউ আহত হওয়ার কোনও তথ্য ছিল না। এমনকি উখিয়া থানা পুলিশের কাছেও হতাহতের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। ঘটনার দুই দিন পর একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’