জামিন পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। এজন্য সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. কাউসার আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘বিকাল ৩টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানের নামে মনোনয়নপত্র তোলা হয়। তার পক্ষে মো. বকুল মিয়া একজন মনোনয়নপত্রটি তুলেছেন।’

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে (নাসিরনগর আমলি আদালত) পুলিশের করা একটি বিস্ফোরক মামলায় হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা মঞ্জুর করেন বিচারক। আদালতে একরামুজ্জামানের পক্ষে জামিন শুনানি করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবী আলী আজম। 

তিনি বলেন, ‌‘ঢাকার একটি মামলায় ২ নভেম্বর ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেছিলেন একরামুজ্জামান। ওই মামলাতেও সেদিন আদালত তাকে জামিন দেন। আজ ওই জামিনের কাগজপত্রসহ অন্যান্য প্রমাণপত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে পেশ করেছি আমরা। সেগুলো বিবেচনা করে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রকিবুল হাসান জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন।’

জামিন পাওয়ার পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান বলেন, ‘আমি মাত্র জামিন পেয়েছি। একটু স্থির হতে দেন আমাকে। এরপর চিন্তা করবো। এখন ঢাকায় যাবো।’

তৃণমূল বিএনপির থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আমি তৃণমূল বিএনপি থেকে কোনও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করিনি।’ 

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তো যে কেউই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারে। আমি আগে স্থির হতে চাই। এখনই কোনও কিছু খোলাসা করতে চাচ্ছি না।’

তবে একরামুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জানিয়েছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেবেন। এজন্য তিনি আজ আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন নিয়েছেন। এ বিষয়ে অবশ্য একরামুজ্জামান এখনই কিছু খোলাসা করতে রাজি হননি। তবে নির্বাচনে লড়বেন, এটা সত্য।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে একরামুজ্জামান ৬০ হাজার ৭৩৪ ভোট পান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ১ হাজার ১১০ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হন। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ৮৫ হাজার ৩৮৮ ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত ছায়েদুল হক নৌকা প্রতীকে ৯৯ হাজার ৮৮৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন।

নাসিরনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে নাসিরনগর উপজেলা সদরের কাঁশফুল রেস্তোরাঁর সামনে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে বিস্ফোরক আইনে ৩৮ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন উপপরিদর্শক (এসআই) রুপন নাথ। সরকারি কাজে বাধাদান, হত্যার উদ্দেশ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার ও পুলিশ সদস্য আহতের ঘটনায় করা ওই মামলায় একরামুজ্জামানকে চার নম্বর আসামি করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ককটেল ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আদালত সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে নিজ গাড়িতে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ আদালত চত্বরে আসেন একরামুজ্জামান। পরে তিনি আইনজীবী সমিতি ভবনের তৃতীয় তলায় এক আইনজীবীর কক্ষে বসেন। দুপুরের দিকে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে বিস্ফোরক আইনের মামলায় হাজিরা দেন। তার পক্ষে আইনজীবী আলী আজমের নেতৃত্বে ১৫ জন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন।

বিএনপি নেতা ও আইনজীবী কামরুজ্জামান মামুন বলেন, ‘একরামুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। তিনি তার লোকজন দিয়ে নির্বাচনি এলাকা থেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন। আঁতাত ছাড়া এই মামলায় তার জামিন পাওয়ার কোনও কথাই নয়। এটা তো এখন দৃশ্যমান।’

প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে এই আসনে মাঠপর্যায়ে একরামুজ্জামানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।