পেট-বুক জোড়া লাগানো যমজ শিশুর চিকিৎসার আকুতি মা-বাবার

বিয়ের ৯ মাসের মাথায় পেট ও বুক জোড়া লাগানো যমজ কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন আফরোজা সুলতানা মেঘলা নামের এক গৃহবধূ। গত ২৬ জানুয়ারি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যমজ এই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। দুই শিশুর নাম রাখা হয়েছে মায়মুনা ও মরিয়ম। তবে যমজ শিশু দুটিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করতে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তাদের বাঁচানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বাবা-মা। চিকিৎসার আকুতি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সহৃদয় ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য চেয়েছেন তারা।

আফরোজা সুলতানা নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার বদলকোট ইউনিয়নের উত্তর বদলকোট দরগাহ বাড়ির মাহবুব আলমের মেয়ে। আফরোজার স্বামী শাহানুর ইসলাম মুন্সীগঞ্জের ভাটারচরে একটি কাপড়ের মিলে শ্রমিকের কাজ করেন।

দুই শিশুর বাবা শাহানুর ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাপড়ের মিলে শ্রমিকের কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাই। আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এ অবস্থায় যমজ শিশুকে অপারেশনের মাধ্যমে আলাদা করতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে বলেছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুই সন্তানের অপারেশনের খরচ চালানোর মতো আমার সামর্থ্য নেই। তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়ার মতো ভাড়াও আমার কাছে নেই। এজন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সহৃদয় ব্যক্তিদের কাছে চিকিৎসা সহায়তার আবেদন জানাই।’

জোড়া লাগানো যমজ শিশুর মা আফরোজা সুলতানা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। স্বামী শ্রমিক ও দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। দুই সন্তানের অপারেশনের খরচ চালানোর আমাদের সামর্থ্য নেই। তাই সরকারি খরচে যেন চিকিৎসা করানো হয়, এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাই।’

চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে যমজ শিশুর নানি ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘১০ মাস আগে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার শাহানুর ইসলামের সঙ্গে আফরোজার বিয়ে হয়। দুটি পরিবারই দরিদ্র। শাহানুর-আফরোজার প্রথম সন্তান মায়মুনা-মরিয়ম। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার আট মাসের মাথায় আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে যমজ শিশুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে বুক-পেট জোড়া লাগানো, তা তখন জানা যায়নি। ২৬ জানুয়ারি ভোরে ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে তাদের জন্ম হয়। পরে নোয়াখালীতে নিয়ে আসা হয়। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ঢাকায় চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। এ অবস্থায় শিশু দুটিকে বাঁচানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি আমরা।’

যমজ শিশুর বুক-পেট জোড়া লাগানো উল্লেখ করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মো. সাইফুদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তবে তারা পৃথকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে এর উন্নত চিকিৎসা আছে। এজন্য আমরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কারণ এখানে তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই।’

এ ব্যাপারে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে আনার পর সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সাইফুদ্দিন ও শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জহিরুল ইসলামসহ বিশেষজ্ঞ দল শিশু দুটিকে দেখে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ  দিয়েছেন। সেখানে নিলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের আলাদা করা যাবে। এজন্য অর্থ প্রয়োজন। তবে পরিবারটি দরিদ্র হওয়ায় ঢাকা মেডিক্যালে নিতে পারছেন না বলে আমাদের জানিয়েছেন।’