প্রেমের বিরোধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত শতাধিক

প্রেমের বিরোধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের বুল্লা গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন পুলিশসহ অন্তত শতাধিক। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ২০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এখনও এলাকায় চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত তিন মাস আগে হরষপুর ইউনিয়নের বুল্লা গ্রামে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) মো. আবু কাউসারের মেয়ে স্থানীয় জয়নাল মেম্বারের গোষ্ঠীর আব্দুল আহাদের ছেলে মহসীনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে প্রেমিক যুগল ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু আগে থেকে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীগত বিরোধ থাকায় দুই পক্ষের কেউ তাদের প্রেমের সম্পর্ককে মেনে নেয়নি। পরে কাউছার মেম্বার এ নিয়ে মামলা করে মেয়েকে নিজ হেফাজতে ফিরিয়ে আনেন। পরে মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেন।

এদিকে প্রেম এবং মামলা এই দুই বিষয় নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ আরও চরম আকার ধারণ করে। এ বিরোধের জের ধরেই বুধবার সকালে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত শতাধিক লোক আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের অন্তত ২০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। আহতদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা জয়নাল মেম্বারের পক্ষের মো. মামুন মিয়া বলেন, ‘আমরা সবাই ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ করেই কাউছার মেম্বারের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের পক্ষের লোকজনের ওপর এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। আমরা আত্মরক্ষায় প্রতিহত করি। এতে উভয় পক্ষের বেশ কিছু লোক আহত হয়।’

অপরদিকে কাউসার মেম্বারের ভাতিজা এইচএম সুমন বলেন, ‘আমার চাচা কাউসার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার। প্রতিপক্ষের সঙ্গে আমাদের জাতীয় নির্বাচনসহ নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিল। এসব বিরোধিতার জের ধরেই সকালে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে পরিকল্পিতভাবে ঘুমন্ত থাকা অবস্থায় আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। আমরা পাল্টা প্রতিহতের চেষ্টা করি। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আমরা হামলাকারীদের বিচার দাবি করছি।’

হামলায় আহতদের মধ্যে ৫০ জনকে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন জাকির (২৮), ফারুক (২৭) কাউসার (৪২), মুখলেস (২৯), মোহন (২৫), জহুরুল হক (৩২), আব্দুল্লাহ (২৫), ছোট্ট মিয়া (৫৫), মিলন মিয়া (২৩), রিপন মিয়া (২৯), জাকির মিয়া (২৮), রিপন মিয়া (২২), আব্বাস আলি (৪৫), তানভীর (২২), রফিক (২৮), আশু মিয়া (৪২), শফিকুল (৩২), রফিক (৩৮), জসিম (৩২), রিপন (২৮), আবু লাল (৪০), কাউসার (১৪), আবন মিয়া (৩০), জয়নাল (৪০), লুৎফুর (৩০), সাদেকুল (৪০), নাজমুল (২০), ওহিদ (৪০), তারেক (২০), রামিত (৩০), জসিম (২০), সিরাজ (৪৫), কুশনাহার (৪০), রাসেল (১৪), নাসির মিয়া (৪৫), ফায়েজ মিয়া (৩০), বিল্লাল মিয়া (৩৫), আব্দুল্লাহ (২৭), আবু তাহের (৯০), মোশাররফ (৩০), সাকিব (১৮), মিলন (২৮), মনা মিয়া (১৮), নাঈম (১৫), হাকিম (৩০), শামীম (৩০), আবুল হোসেন (৩৫), মোজাম্মেল (২৫), মামুন (৩৫) ও আজগর (৪০)।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. সুমন ভুঁইয়া বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় আমরা অন্তত একশর বেশি রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। তাদের অধিকাংশের মাথা, গাল, পা, কপালে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’

এদিকে ঘটনা সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বিল্লাল হোসেন জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে বিজয়নগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পূর্ববিরোধ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১০ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে আরও ২৩ জনসহ মোট ৩৩ জনকে আটক করেছে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিজয়নগর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।