অপহরণের পর এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেফতার

কুমিল্লার দেবিদ্বারে অপহরণের পর আবু সায়েম নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের ছেলে মো. মামুন পলাতক রয়েছেন। তাকেও গ্রেফতারের চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতার মো. খোরশেদ আলম উপজেলার গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। নিহত আবু সায়েম (৩৯) একই ইউনিয়নের চাষারপাড় গ্রামের আবদুর রহিম সরকারের ছেলে।

আবু সায়েমের শ্বশুর মো. ছিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘সোমবার (৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আমার মেয়ের জামাই সায়েমকে অপহরণ করেন চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমের ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে সাত-আট জন ব্যক্তি। খবর পেয়ে বিভিন্ন স্থানে আমরা তাকে খুঁজেছি। বিকাল ৫টার দিকে সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ আমাকে ফোন করে জানান, সায়েম তার ছেলে মামুনের সঙ্গে আছে। মামুন আমার জামাইয়ের কাছে যৌথ ব্যবসার যে টাকা পাবে, সে টাকা ফেরত দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় খোরশেদ আমাকে যাত্রাবাড়ীর একটি বাসায় সায়েমের সঙ্গে দেখা করান। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, মঙ্গলবার সকালে খোরশেদের বাড়িতে লেনদেনের বিষয়টি মীমাংসা হবে। আমি সায়েমকে সঙ্গে নিয়ে আসতে চাইলে খোরশেদ বলেন তার জিম্মায় থাকবে। সেখান থেকে রাতে তাকে নিয়ে প্রাইভেটকারে দেবিদ্বারে রওনা হন তারা। প্রাইভেটকারে জায়গা না হওয়ায় আমি বাসে রওনা হই। কুমিল্লার ময়নামতি এলাকায় আসার পর রাত সাড়ে ১০টায় খোরশেদ আমাকে ফোন করে জানান, সায়েম চা-পানের কথা বলে পালিয়ে গেছে। রাত সোয়া ১টায় আবারও ফোনে জানান, সায়েম খুবই অসুস্থ। তাকে আমি ও আমার স্ত্রী দেবিদ্বারে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, তুমি দ্রুত আসো। হাসপাতালে গিয়ে দেখি সায়েমের লাশ পড়ে আছে। চোখ-মুখ ফোলা, গলায় ও পিঠে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে খোরশেদকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে এ ঘটনায় মামলা করেছি আমরা।’

সায়েমের ছোট ভাই আবু কাউছার সরকার বলেন, ‘কয়েক বছর আগে খোরশেদ আলমের ছেলে মামুনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে তার সঙ্গে যৌথ ব্যবসা শুরু করে সায়েম। সম্প্রতি ব্যবসার অবস্থা কিছুটা খারাপ হওয়ায় ওই টাকার জন্য মামুন চাপ দিলে সাত লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি টাকার জন্য একটি ফাঁকা চেক দেওয়া হয়। পরে মামুন ওই চেক দিয়ে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা করে। মামলা চলা অবস্থায় মামুন ও তার বাবার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার ভাইকে অপহরণ করে। সোমবার রাতে সায়েম আমাকে ফোন দিয়ে বলে, আমার পিকআপভ্যানটি মামুনকে দিয়ে দিলে তাকে ছেড়ে দেবে। এই কথা শুনে আমি পিকআপটি মামুনকে দিয়ে দিই। এরপরও আমার ভাইকে চেয়ারম্যান ও তার ছেলে সন্ত্রাসী দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় খোরশেদ ও তার ছেলে মামুনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

দেবিদ্বার থানার ওসি মো. নয়ন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সায়েমের ভাই আবু কাউছার বাদী হয়ে চার জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন। মামলার প্রধান আসামি সাবেক চেয়ারম্যানের ছেলে মামুন, তার সহযোগী দুই আসামি মোস্তফা ও মিন্টু পলাতক রয়েছে। এছাড়া ২ নম্বর আসামি সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। সায়েমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’