স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে ফেনীর উত্তরের তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার শতাধিক গ্রামের লাখো মানুষ। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট-ঘরবাড়ি। এ অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতিতে আটকে পড়া পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বাসিন্দাদের উদ্ধারে নেমেছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও কোস্টগার্ড। ইতোমধ্যে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ১২টি বোট নিয়ে বন্যাকবলিত স্থানে পৌঁছেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। উদ্ধারকাজে সহায়তা শুরু করেছেন চট্টগ্রাম থেকে আসা কোস্টগার্ড সদস্যরাও।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সবগুলো ভাঙনের স্থান দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করে ডুবছে একের পর এক জনপদ। এতে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। বন্যা পরিস্থিতির কারণে মঙ্গলবার রাত থেকে দুর্গত এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। অনেকের ঘরে রান্না করাও সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বাড়ির ছাদে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়। এরপর স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে তারা। একইসঙ্গে বিজিবি সদস্য ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক পরিবারের শত শত স্বেচ্ছাসেবক উদ্ধার ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করছেন।
বুধবার (২১ আগস্ট) বিকালে আইএসপিআরের পক্ষ থেকে বার্তা দিয়ে জানানো হয়, পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে স্পিডবোট ও হেলিকপ্টার। দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
পরশুরাম উপজেলার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এমন ভয়াবহ বন্যা জীবনেও দেখিনি। সময় বাড়ার সঙ্গে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। টানা বৃষ্টি পড়তে থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছি।’
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রায়হান মেহেবুব জানান, ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টার প্রস্তুত আছে। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে তারা অভিযান শুরু করতে পারছে না। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ ও খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, ‘বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী স্পিডবোট নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তাদের সঙ্গে কোস্টগার্ডের টিম যোগ দিয়েছে। এ ছাড়া বিজিবি ও স্বেচ্ছাসেবকরা সকাল থেকে আটকে পড়া মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে কাজ করছেন। ত্রাণ সহায়তা ও উদ্ধার অভিযান চলছে।’
গত মাসের মাসের শুরুতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর ১৫ স্থানে ভাঙন দেখা যায়। সেসময় মেরামত করা হলেও চলতি মাসের শুরুতে বাঁধের আরও ১২ জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়। দেড়মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফার বন্যায় বাঁধ ভেঙে অবকাঠামো, ধান, ফসল ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ৩০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ১৫ দিনের মাথায় আবারও দেখা দিলো বন্যা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফেনী আবহাওয়া অধিদফতরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ফেনীতে টানা তিন দিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। জেলায় বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’