নোয়াখালীতে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে খুব ধীরগতিতে নামছে পানি। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। উজান থেকে এখনও আসছে স্রোত। এখনও প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। বিশেষ করে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন অনেকে। বেশিরভাগ মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে আছে।
শুক্রবার বিকালে সরেজমিনে সদর, বেগমগঞ্জ ও সেনবাগ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সবগুলো সড়ক এখনও পানির নিচে। পানিতে চারপাশ থইথই। বেশিরভাগ বাসাবাড়ি ডুবে আছে। সড়কগুলোতে রিকশা, অটোরিকশার চলাচলও কম। হেঁটে পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন মানুষজন। অনেকে আবার বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। সব মিলিয়ে এখনও দুশ্চিন্তা কাটেনি জেলার বাসিন্দাদের।
একইভাবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জন কার্যালয়, জেলা জজ আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও সার্কিট হাউজ সড়কসহ মাইজদীর প্রায় সব সড়ক হাঁটুপানির নিচে তলিয়ে আছে। শহরের বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। অফিস আদালতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা ইমরান হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন। ঘরের ভেতর পানি উঠেছে। বাবা-মাকে বারবার বুঝিয়ে এতদিন আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে পারিনি। শুক্রবার সকালে তারা নিজ থেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। কারণ আমাদের ঘরের ভেতর কোমরসমান পানি।’
বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের কুসুম আক্তার বলেন, ‘ঘরে পানি উঠায় অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে আরেকজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। এখন সেখানেও পানি উঠেছে। এবার কোথায় যাবো, ভেবে পাচ্ছি না।’
সেনবাগ ও বেগমগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ফেনী থেকে তাদের এলাকায় পানি আসছে। এ কারণে নোয়াখালীতে বৃষ্টি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হচ্ছে না।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান খান বলেন, ‘জেলার ৯টি উপজেলায় ২০ লাখের বেশি মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় ঘরে আছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন প্রায় ৭৬ হাজার মানুষ। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে দুজনের মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছি আমরা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি বরাদ্দ হিসেবে এ পর্যন্ত ৫০৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের পর্যবেক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এর আগের ২৪ ঘণ্টার প্রায় অর্ধেক। বৃষ্টি আরও কমে আসবে। তখন বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’