পাহাড়িদের জমিতে কাজ করতে দেননি সাবেক মন্ত্রীর ‘বাহিনী’

বান্দরবানের লামার সরই ইউনিয়নের আন্দারীর ফুইট্টার ঝি‌রি এলাকায় পাহাড়ি বাঙালিসহ প্রায় ১০০ পরিবারকে ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ দি‌য়ে নিজ জমিতে কাজ কর‌তে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লামার সরইতে ফুইট্টা ঝি‌রি এলাকার বাসিন্দারা এ অভিযোগ করেন।

ভুক্ত‌ভো‌গীরা জানান, প্রতিদিনের মতো পাড়াবাসীরা ফুইট্টার ঝি‌রি এলাকায় নিজ জমিতে কাজ কর‌তে গেলে হঠাৎ স্থানীয় সন্ত্রাসী জাবেদ, সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ম্যানেজার সাহাবু‌দ্দিন, সা‌হেদ হো‌সেনসহ একদল লোক দা ও লাঠি নি‌য়ে হামলা চালা‌তে আসে। এ সময় তাদের ভয়ে পাড়াবাসীরা নিজেদের জায়গা থেকে পালিয়ে যায়।

তাদের দাবি, সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম লামার সরইতে নিয়মব‌হির্ভূতভা‌বে দলিলে জালিয়াতির আশ্রয় নি‌য়ে জোর করে দখলে নিয়েছেন প্রায় কয়েকশ কোটি টাকার জমি। এ জ‌মিগু‌লোও সরকারিভাবে জব্দ করার দাবি জানান তারা।

তা‌দের অভিযোগ, সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের স্বজন এবং কেয়ারটেকাররা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের ধরলে সাবেক মন্ত্রী‌কেও খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, ‘বান্দরবানের স্থানীয় বাসিন্দা না হলে কেউ জায়গা কিনতে পারেন না। তাহলে মন্ত্রী কীভাবে জায়গা কিন‌লেন? আমরা বান্দরবা‌নে থেকে লিজ পাই না। বাইরে থেকে এসে তারা কীভাবে লিজ নেন।’ বিষয়‌টি তদন্ত ক‌রে তা‌দের জায়গা বাতিলের দা‌বিসহ জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্তা‌দের শাস্তির দাবি জানান তিনি।

পাড়ার বাসিন্দা পাইসা প্রু বলেন, ‘এ জায়গাগু‌লো আমা‌দের দীর্ঘদিনের দখলে। এ জমিতে আমরা চাষাবাদ ক‌রে পরিবারের খরচ জোগান দিই। আগেও মন্ত্রীর লোকজন আমা‌দের এ জায়গা থেকে কয়েকবার সরা‌নোর চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু সরকার পতনের পর কয়েকদিন আমরা শান্তিতে থাকলেও আবার তারা আমা‌দের ওপর হামলা চালিয়ে জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।’ মন্ত্রী তাজুল ইসলামসহ স্বজন‌দের সব সম্পত্তি জব্দের জন্যও দাবি জানান এই বাসিন্দা।

মতিলাল ত্রিপুরা বলেন, ‘আমা‌দের দীর্ঘ ৫০ বছ‌রেরও বে‌শি সময় ধ‌রে জুম চা‌ষের জ‌মিগু‌লো সা‌বেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, তার স্ত্রী ফে‌ৗজিয়া ইসলাম ও স্বজন শাহ আলম মুকুল মি‌লে দখল কর‌ছে। আমরা আমা‌দের নিজ জ‌মি‌তে কাজ কর‌তে গে‌লে সন্ত্রাসী বা‌হিনী দি‌য়ে হুম‌কি দেয়। এখন আমরা জা‌নের নিরাপত্তা নি‌য়ে ভ‌য়ে আছি।’

বীর বাহাদুর ত্রিপুরা বলেন, ‘সা‌বেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, তার স্ত্রী ও স্বজন শাহ আলম মুকুল স্থানীয় প্রভাবশালী হা‌রেজ কোম্পানি, ফ‌রিদ চেয়ারম‌্যান ও সিরাজ চেয়ারম‌্যা‌নের মাধ‌্যমে সন্ত্রাসী জোগাড় ক‌রে আমা‌দের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা জ‌ড়ি‌ত সবার শা‌স্তির দা‌বি জানাচ্ছি।’

আমেনা বেগম বলেন, ‘সা‌বেক মন্ত্রী তাজুল, তার স্ত্রী ফে‌ৗজিয়া ইসলাম ও স্বজন শাহ আলম মুকুল শুধু জায়গা দখল ক‌রেন‌নি। মস‌জিদ ভে‌ঙে কবরস্থা‌নের জায়গাও দখল কর‌ছেন। আমরা মামলা দেওয়ার পরও পু‌লিশ তা‌দের ধ‌রে না। আমরা সব‌কিছুর বিচার চাই।’

রিক্শাচালক ইসমাইল ব‌লেন, ‘আমার একসময় অনেক কিছু ছিল। সা‌বেক মন্ত্রী তাজুল ও তার স্বজনরা এসে আমা‌দের ফস‌লি জমি, বড় বড় গাছপালা, পাহাড় দখল ক‌রে রে‌খে‌ছে। এখন আমি সব হা‌রিয়ে রিকশা চালাই।’

সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের আত্মীয় শাহ আলম মুকুল দাবি করেন, ‘মন্ত্রীর নামে কোনও জায়গা নেই। তার স্ত্রী আমার এবং স্বজন‌দের জায়গা রয়েছে। আমার চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় কোটি টাকার ব‌্যবসা রয়েছে। সেই টাকা দি‌য়েই জায়গা কিনেছি।  অন্যরা কীভাবে কিনেছে জানি না। আমরা কোনও জালিয়াতি করিনি। আমা‌দের জমির দলিলে কোনও সমস্যা নাই। আমরা জোরপূর্বক কারোর জায়গাও দখল করিনি। আমা‌দের জায়গা থেকে বহিরাগতরা গাছপালা কেটে নি‌য়ে যাচ্ছে।’

মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী পালিয়ে বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন।’

এ বিষ‌য়ে সরই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এনামুল হক বলেন, ‘আজ‌কে হামলার কোনও খবর পাইনি। তবে সাবেক মন্ত্রীর জায়গায় গি‌য়ে অনেকে গাছপালা কেটে নি‌য়ে গেছে বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে আমি কোনও অভিযোগ এখনও পাইনি।’

উল্লেখ্য, বান্দরবানের লামার সরইতে সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের স্ত্রী ফৌ‌জিয়া ইসলামসহ তার স্বজন‌দের প্রায় ৫০০ একরেরও বেশি জমি দখলে রয়েছে।