ছাত্রকে শাসন করায় প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা

বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম চলাকালীন পাশের কক্ষ থেকে এক ছাত্র উচ্চস্বরে কথা বলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল। যে কারণে ওই ছাত্রকে শাসন করেন স্কুলের এক সহকারী শিক্ষক। এই বেত্রাঘাতের প্রতিশোধ নিতে স্কুলে দলবল নিয়ে আসেন ওই ছাত্রের বাবা। পরে বেত্রাঘাতকারী শিক্ষককে না পেয়ে অফিস কক্ষে এসে প্রধান শিক্ষককে হামলা করে তারা।

শনিবার (২৪ মে) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের ভোগই আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থীর নাম ফাহাদ হোসেন। হামলাকারী তার বাবা খোরশেদ আলম মিন্টু ও তার আত্মীয় মো. হাবিব। আর হামলার শিকার ওই প্রধান শিক্ষকের নাম ইলিয়াস ভুঁইয়া। এদিকে আহত স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস ভুঁইয়া নাথেরপেটুয়া মর্ডান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক ওমর ফারুক নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে সহকারী শিক্ষক শাখাওয়াত হোসেন সপ্তম শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছিলেন। ক্লাস চলাকালীন পাশের নবম শ্রেণির কক্ষ থেকে দুই ছাত্র উচ্চস্বরে কথা ও হাসিঠাট্টা শুরু করেন। পরে নবম শ্রেণির ক্লাস করতে আসেন ওই সহকারী শিক্ষক। এ সময় উচ্চস্বরে কথা ও হাসিঠাট্টা করার বিষয়টি জানতে চাইলে ফাহাদ বলে, দশম শ্রেণির ছাত্র সালমানসহ করেছি এতে কোনও দোষের কিছু কি আছে! এমনকি সে ক্লাসে খারাপ আচরণ শুরু করে। এ সময় শিক্ষক শাখাওয়াত হোসেন ফাহাদকে বেত্রাঘাত করে। একটি আঘাত ঠেকাতে গেলে ওই ছাত্রের বাঁ পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ওই ছাত্র বাইরে গিয়ে তার আত্মীয়স্বজনদের বিষয়টি জানায়। পরে সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রের আত্মীয় হাবিব ও ছাত্রের বাবা খোরশেদ আলম মিন্টুসহ কয়েকজন বিষয়টি জানার জন্য বিদ্যালয়ে আসেন। শিক্ষকরা বেত্রাঘাতের কারণ জানান। ঘটনা শুনে অভিভাবকরা শিক্ষকদের বলেন, এভাবে মারপিট করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি তাদের জানানো ভালো ছিল। ছাত্র ও শিক্ষকের বিষয়টি স্কুল কমিটির লোকজনসহ একদিন পরে সমাধান করে দেবেন বলে অভিভাবকদের জানান প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস ভুঁইয়া। এ সময় প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে ছাত্রের আত্মীয় হাবিব নামে এক ব্যক্তি। পরে ছাত্রের বাবা খোরশেদ আলম মিন্টু একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা চালালে এতে গুরুতর আহত হন প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস ভুঁইয়া। বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

সহকারী শিক্ষক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ক্লাস চলাকালীন সময়ে নবম শ্রেণির ছাত্র ফাহাদ উচ্চস্বরে কথা ও হাসিঠাট্টা করার কারণে আমি তাকে শাসন করি। তাকে বেশি শক্তি প্রয়োগ করে বেত্রাঘাত করিনি। সে বাইরে গিয়ে লোকজন নিয়ে এসে আমাকে আঘাত না করে প্রধান শিক্ষক স্যারের গায়ে আঘাত করে। হাবিব নামে যে ব্যক্তি খারাপ আচরণ ও স্যারের গায়ে আঘাত করেছে সে এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য করেছে।’

ঘটনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি জানান, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে থানা পুলিশ।

মনোহরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপুল চন্দ্র দে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনার স্থলে গিয়েছে। ছাত্র ফাহাদ ও তার বাবা খোরশেদ আলম মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় আনা হয়েছে। বর্তমানে তারা থানায় রয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।