নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ‘ঘুষের’ টাকা না পেয়ে রোগী ও তার স্বজনদের মারধর করেছেন হাসপাতালের এক ওয়ার্ড বয়। এ নিয়ে কারও কাছে অভিযোগ দিলে রোগীকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা।
শুক্রবার রাত ১১টার দিকে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে শনিবার (১৪ জুন) দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন রোগী ও তার স্বজনরা।
মারধরের শিকার রোগী মো. মোস্তফা বলেন, ‘শুক্রবার রাত ৯টার দিকে সুবর্ণচর উপজেলার পাংখার বাজার এলাকা থেকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালের ৮ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হই। বেড খালি না থাকার অজুহাত দেখিয়ে আমাকে মেঝেতে থাকতে বলা হয়। মেঝেতে থাকলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়তে পারে ভেবে মেডিসিন ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ওয়ার্ড বয় নুর হোসেনের কাছে একটি সিট চান আমার বাবা আব্দুর রশিদ। নুর হোসেন বাবার কাছে ৩০০ টাকা ঘুষ চেয়ে বলেন টাকা দিলে বেডের ব্যবস্থা করে দেবেন। বাবা ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানান। রাত ১১টার দিকে আমার বাবা পাশের ওয়ার্ডের এক রোগীর সিটে বসলে নুর হোসেন গালিগালাজ শুরু করেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালে নুর হোসেন আমাকে চড় মেরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। বাবাকেও মারধর করেছেন। এ নিয়ে কথা বললে আমাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন।’
মোস্তফার স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘রাতে স্বামী ও শ্বশুরকে মারধরের পর ওয়ার্ড বয় নুর হোসেন বলেছেন, কাউকে এ ঘটনা জানালে চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেবেন আমাদের।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ওয়ার্ড বয় নুর হোসেনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।
রোগী ও স্বজনদের মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আব্দুল মোক্তাদির হোসাইন তুহিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে মেডিসিন ওয়ার্ডে নুর হোসেন ডিউটি করেছিল। রোগী ও স্বজনদের মারধরের বিষয়টি শোনার পর থেকে আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগের একাধিকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মোবাইল নম্বরটি বন্ধ থাকায় এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করতে পারিনি। হয়তো নাইট ডিউটি করে মোবাইল বন্ধ করে বাসায় গিয়ে ঘুমাচ্ছে। আজ রাতেও তার ডিউটি আছে। ডিউটিতে আসলে এ বিষয়ে তার কাছে জবাব চাওয়া হবে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালে কর্মরত আরেক ওয়ার্ড বয় বলেন, ‘নুর হোসেনের বাড়ি হাসপাতাল এলাকায় হওয়ায় প্রভাব দেখিয়ে প্রায়ই রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। রোগীদের কাছ থেকে টাকা না পেলে মেডিসিন ওয়ার্ডে কোনও রোগীকে বেড দেন না। এমনটি টাকা ছাড়া কোনও সেবাও মেলে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাজীব আহমেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোগী এবং তার স্বজনরা অভিযোগ আপনার কাছে করেছে, আমার কাছে তো করেনি। আমরা এ ধরনের কোনও বিষয় জানি না। কেউ আমাদের জানায়নি। রাতে ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার হাসপাতালে দায়িত্বে ছিলেন। তার কাছে কেউ অভিযোগ করেছে কিনা জিজ্ঞেস করেন। তিনি আমাদের বিষয়টি জানাননি। জানলে তো ব্যবস্থা নিতাম।’