শ্যামল কান্তি ইস্যুতে মাঠে হেফাজত

৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম, শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি, হরতাল অবরোধের ঘোষণা

নারায়ণগঞ্জের হেফাজতের সমাবেশনারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই ইসলামকে কটূক্তির বিষয়টি চাপা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতারা। তারা বলেছেন, আল্লাহকে কটূক্তি করার সূত্র ধরেই ওই ঘটনার সূত্রপাত। এ কারণে ওই শিক্ষকের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। একই সময়ে শিক্ষককে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিলসহ শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ না করলে নারায়ণগঞ্জ থেকে হরতাল, অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা করা হবে।
শুক্রবার দুপুরে জুমআর নামাজের পর শহরের ডিআইটি মসজিদের সামনে বঙ্গবন্ধু সড়কে ‘নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মুসলিম জনতা’ ইসলামকে কটূক্তির প্রতিবাদে ওই সমাবেশে এই আলটিমেটাম দেওয়া হয়। পরে একটি মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে জুমআর নামাজের পর থেকেই শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে মুসল্লিরা মিছিল নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে ওই সমাবেশে যোগ দিতে থাকে। দুপুর ২টা থেকে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত ওই সমাবেশে বৃষ্টির মধ্যেই কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত হন।

সভাপতির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের আমির ও শহরের অন্যতম বৃহৎ ডিআইটি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল আউয়াল বলেন, ‘যে ঘটনা নিয়ে সূত্রপাত আমরা ইতোমধ্যে সেই ছেলের (রিফাত) সঙ্গে কথা বলেছি। সে মসজিদে বসে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে যে- ইসলাম নিয়ে ওই শিক্ষক কটূক্তি করেছেন। তাই নারায়ণগঞ্জের মুসলিম জনতা এ ব্যাপারে আর বসে থাকছে না। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যদি শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের শাস্তি, শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ এবং শিক্ষক পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিল না হয় তাহলে নারায়ণগঞ্জে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে সারাদেশ অচল করে দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে আরও খবর পড়ুন-

শ্যামল কান্তি ভক্তআমার অবস্থাও সাত খুনের মতো হতে পারে: শ্যামল কান্তি ভক্ত

ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা হেফাজতের সদস্য সচিব মাওলানা আবদুল কাদির, জেলার সমন্বয়ক ফেরদাউসুর রহমান, ওলামা পরিষদের আহ্বায়ক মুফতি আবুল হাশেম, মাওলানা এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী, মুফতি দেলোয়ার হোসেন, মুফতি হারুন অর রশিদ, মুফতি সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা আনিস আনসারী, মাওলানা আব্দুল লতিফ।

সমাবেশে যে ছাত্রকে নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত সেই রিফাত হাসানও উপস্থিত ছিলেন। এসময় ঘটনার বিবরণ দেন রিফাত এবং শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলাম নিয়ে কটূক্তির বিবরণ দেন।

গত ৮ মে নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার স্কুলে রিফাত হোসেন নামের স্কুলছাত্রকে মারধরের সময়ে ক্লাসরুমে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনার জের ধরে ১৩ মে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে গণপিটুনি এবং পরে তাকে উদ্ধারের সময়ে কান ধরে উঠবোস করান এমপি সেলিম ওসমান।

যদিও ধর্মীয় কটূক্তির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক। তবে ওই ছাত্র রিফাত হাসান বিবিসি বাংলাকে ধর্মীয় কটূক্তির বিষয়টি স্বীকার করে বক্তব্য দেন। বৃহস্পতিবার সকালে এমপি সেলিম ওসমান সংবাদ সম্মেলনে ধর্মীয় কটূক্তি হয়েছে দৃঢ়কণ্ঠে জানিয়ে বলেন, ‘ইসলামকে কটূক্তি করার কারণেই একজন কটূক্তিকারকের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কোনও শিক্ষককে আমি শাস্তি দেই নাই। তাই ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই। আমি কার কাছে ক্ষমা চাইব, যিনি আল্লাহকে কটূক্তি করেছেন? তবে আমি লজ্জিত এবং সমাজের কাছে দুঃখিত যে তারা এমন একটি ভিডিও দেখেছেন যাতে তারা আমাকে ভুল বুঝেছেন। আদালত রুল জারি করেছেন, এখন আদালত যদি আমার ফাঁসিও দেন, তাহলেও আমি আপত্তি করব না। তবে আমি এটা মনে করব যে, জাহান্নামের আগুন থেকে আমি বেঁচে গেছি।’

এ অবস্থায় বুধবার নারায়ণগঞ্জ হেফাজত এক বিবৃতিতে ১৩ মে এর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।

/এএইচ/

আরও খবর পড়ুন-

ব্যবস্থাপনা বইপাঠ্য বইয়ে ভাইভার, স্কাইপকে ‘সেক্স ক্যামেরা’ আখ্যা!