টার্গেট ছিল বিদেশিরা

গুলশান হামলার পরদিনই নারায়ণগঞ্জে আস্তানা গাড়ে জঙ্গিরা

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পরদিনই নারায়ণগঞ্জে আস্তানা গাড়ে ওই হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ জঙ্গিদের একটি অংশ। এদের তিনজন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করে মূলত ওই জেলায় বসবাসরত বিদেশিদের ওপর হামলা চালানোই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।

নারায়ণগঞ্জের এই বাড়িতেই চালানো হয় অপারেশন `হিট স্ট্রং ২৭`সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থাও তাদের প্রতিবেদনে নারায়ণগঞ্জে বিদেশিদের ওপর হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু রাজধানীর পর পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বসবাস করে, সেহেতু এ জেলার শহর ও শহরতলীতে জঙ্গিরা অবস্থান করে হামলার ছক কষতে পারে।

এদিকে পাইকপাড়াতে তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গির মৃত্যুর পর শহরে আরও কোন জঙ্গি থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না প্রশাসন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকাতে চলছে ব্লক রেইড। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের শিল্প এলাকায় গার্মেন্টস কারখানা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া আদমজীতে রয়েছে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড)। সেখানে ২৮২ জন বিদেশি কাজ করে।

এছাড়া ফতুল্লা শিল্পাঞ্চল, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চলেও রয়েছেন অনেক বিদেশি। এদের মধ্যে অর্ধশত বিদেশি নাগরিক বসবাস করেন সদর উপজেলার ফতুল্লার ভূঁইগড়ে। সেখান থেকে ঢাকা, ফতুল্লা, আদমজী, কাঁচপুরে যাতায়াত খুবই সহজ।

গত শনিবার নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়া এলাকায় তিন জঙ্গি নিহতের পর গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনটি আবারও আলোচনায় আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, গুলশানে হামলার পর এ ব্যাপারে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। তাতে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জে বসবাসরত বিদেশিরাও ঝুঁকির বাইরে না।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিদের অবস্থানের মূল লক্ষ্য ছিল রাজধানীর আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত বিদেশিদের ওপর হামলা চালানো। এ টার্গেট নিয়েই তারা ঘনবসতিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ এলাকা বেছে নেয়।’

সন্দেহ এড়াতেই শহরের বাইরে বাসা ভাড়া নেয় জঙ্গিরা
গুলশান হামলার আগেই জঙ্গিদের একটি ছক করা ছিল। আর তাতে ছিল গুলশান হামলার পর জঙ্গিরা কারা কোথায় থাকবে, কী করবে তার সবকিছু। সে ছক অনুযায়ী ১ জুলাই গুলশানের হামলার পরদিনই নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার বাড়িতে ওঠে জঙ্গি তামিমসহ অন্যরা। আর সে জন্য জুনের শেষেই বাসা ভাড়ার অগ্রিম হিসেবে ৭ হাজার টাকা পরিশোধ করে জঙ্গিরা।

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পাইকপাড়ার ওই এলাকাটি সবদিক থেকেই নিরাপদ। কারণ পাইকপাড়া থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। উত্তরের দুটি সড়ক দিয়েই শহরের দিকে যাওয়া যায়, যেখান থেকে রাজধানী মাত্র ৩০ মিনিটের পথ। যাওয়া যায় দেশের পূর্বাঞ্চলেও। বাড়িটির দক্ষিণ দিক দিয়ে চলে গেছে দুটি সড়ক। কিছুটা প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর তেমন কোনও উপস্থিতিও নেই।

এছাড়া যে বাসাটি জঙ্গিরা ভাড়া নেয়, তার পাশেই আছে একটি কবরস্থান। এ কারণে সেখানে প্রচুর বাইরের লোকজন যাতায়াত করে। ফলে তামিমসহ অন্যরা যারা বাসা ভাড়া নেয়, তাদের নিয়ে খুব আগ্রহও ছিল না এলাকাবাসীর।

/এমও/এইচকে/এআরএল/