তিন তরুণীর অন্যরকম বিয়ে






IMG_1625সাভারের বেদে পল্লী। সাপের খেলা দেখিয়ে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করেন এখানকার লোকজন। মেয়ের বিয়ে দেওয়া বেদে পল্লীর প্রত্যেক বাবা-মায়ের জন্য কঠিন থেকে কঠিনতম কাজ। মেয়েকে বিয়ে দেওয়া নিয়ে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকেন। বেদে পল্লীর তিন বাবা-মায়ের এ দুশ্চিন্তা দূর করে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান। নিজ উদ্যোগে তিন বেদে তরুণীর যৌতুকবিহীন বিয়ে দিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, বিয়ের কেনাকাটা থেকে কন্যা দান, অতিথি আপ্যায়ন, উপহার, সব আয়োজনই হয়েছে তার তত্ত্বাবধানে।

এ উপলক্ষে শুক্রবার সকাল থেকেই সাভার পৌর এলাকার পোড়াবাড়ি মহল্লার বেদে পল্লীতে ছিল উৎসবের আমেজ।
বেদে পল্লীর বাবুল মিয়ার মেয়ে মাছেনার সঙ্গে সাপুড়ে কাওছার (২২), আরকান মিয়ার মেয়ে লিমার সঙ্গে গাড়ির ড্রাইভার সাদ্দাম হোসেন (২২) এবং ওমরপুর এলাকার মোস্তাকিনের মেয়ে মজিরনের সঙ্গে মুদি ব্যবসায়ী সাদ্দাম মিয়ার (২৩) বিয়ে হয়। বিয়ের পরে পুলিশ ও তৈরি পোশাক কারাখান ‘উত্তরণ’ এর উদ্যোগে নব দম্পতিদের উপহার হিসেবে নগদ অর্থ ও আসবাবপত্র দেওয়া হয়।
IMG_1660
ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেদে পল্লীতে মেয়েদের বাল্যবিয়ে দেওয়ার প্রচলন ছিল। এখানকার মেয়েদের ১৩-১৪ বছর বয়স হলেই অভিভাবকরা বিয়ে দিয়ে দিতেন।এছাড়া বিয়েতে যৌতুক দেওয়া ও নেওয়ার প্রথাও ছিল এখানে। এ সব কারণে বেদে পল্লীর তরুণীদে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য তিন তরুণীর যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন করেছি।’

সাভার বেদে পল্লীর পোড়াবাড়ি সমাজকল্যাণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক রমজান আহামেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ঢাকা জেলার এসপি থাকা অবস্থাতেই বেদেদের জীবন মানোন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তার কঠোর পরিশ্রমের কারণেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরেছেন তারা।’ এছাড়াও বেদেদের কর্মংস্থানের জন্য উত্তরণ নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এখানে অসংখ্য নারী কাজ করে স্বচ্ছল জীবন যাপন করছে।
IMG_1648
তিনি আরও বলেন, ‘বেদেদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এমনকি আজ তিনি একটি যৌতুকবিহীন বিয়ে দিয়ে তিন বেদে তরুণীর সুন্দর একটি ভবিষ্যত উপহার দিলেন।’

মাছেনার বাবা বাবুল মিয়া ও মজিরন আক্তারের বাবা মোস্তাকিন বলেন, ‘মেয়েরা বড় হওয়ার পর বিয়ের দায়িত্ব বাবাদের। তবে আমরা খুব গরিব। সাপের খেলা দেখিয়ে কোনও রকম দিন কেটে যায়। সেখানে আবার মেয়ের বিয়ে দেওয়া তো কঠিন কাজ। অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান সব দায়িত্ব নিজ হাতে নিয়ে মেয়েদের বিয়ে দিলেন। আমরা মেয়ে জন্ম দিয়েছি ঠিকই কিন্তু প্রকৃত বাবার দায়িত্ব পালন করলেন তিনিই।’IMG_1640
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজির সঙ্গে বেদে পল্লীতে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান ও ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মালেকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

/এআর/এসটি/