ছাত্রলীগের মিছিল থেকে শহীদ মিনারে রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভাঙচুর!

ছাত্রলীগের মিছিল থেকে শহীদ মিনারে রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভাঙচুর!
নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রবীন্দ্র জয়ন্তী উৎসবের অনুষ্ঠানের জন্য আনা চেয়ার ও সাউন্ড বক্স ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় হামলাকারীরা স্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে। এই হামলার ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যদের চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতারা।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রাব্বিকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।ছাত্রলীগের মিছিল থেকে শহীদ মিনারে রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভাঙচুর!

আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ৫০ মাস উপলক্ষে গত শুক্রবার (৫ মে) চাষাঢ়া শহীদ মিনারে মোম শিখা প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠান হয়। সেখানে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য নারায়ণগঞ্জের এক নেতাসহ তার পরিবার সদস্যদের শাস্তি চেয়ে বক্তব্য রাখেন রফিউর রাব্বি। ওই বক্তব্যের প্রতিবাদের অংশ হিসেবে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় শহরের নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের সামনে থেকে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান রিয়াদ, যুগ্ম আহ্বায়ক হাসনাত রহমান বিন্দুর নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলের শুরু থেকেই অনেকের হাতে হকিস্টিক, বাঁশ, লাঠি দেখা গেছে। মিছিলের শুরুতে ও শেষে ছিল পুলিশের উপস্থিতিও ছিল। মিছিলটি শহরের চাষাঢ়া হয়ে বঙ্গবন্ধু সড়ক দিয়ে দুই নং রেলগেট ঘুরে আবারও চাষাঢ়া বিজয় স্তম্ভের সামনে সমাবেশ করে।শহীদ মিনারে ভাঙচুর

সমাবেশে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান রিয়াদ বলেন, ‘রফিউর রাব্বি একজন নাস্তিক। তিনি সন্তানের লাশ নিয়ে রাজনীতি করছেন। শহীদ মিনারের মতো জায়গায় তার অনুষ্ঠান করার অধিকার নেই। আমরা মহানগর ছাত্রলীগ শহীদ মিনারে রাব্বিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।’

সমাবেশ শেষে লাঠিসোটা নিয়ে শহীদ মিনারে ভাঙচুর চালানো হয়। সন্ধ্যায় রবীন্দ্র জয়ন্তী উপলক্ষে শহীদ মিনারে ছিল ‘উন্মেষ’ সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বির উপস্থিত থাকার কথা ছিল। ওই অনুষ্ঠান উপলক্ষে সেখানে প্রচুর চেয়ার ও সাউন্ড বক্স রাখা ছিল। সেগুলোও ভাঙচুর করা হয়। তবে ভাঙচুরের বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যান হাবিবুর রহমান রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘আমরা কিংবা ছাত্রলীগের কেউ ভাঙচুর করেনি।’ছাত্রলীগের মিছিল থেকে রফিউর রাব্বীর কুশপুত্তলিকা দাহ

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরফুউদ্দিন বলেন, ‘কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলে শহীদ মিনারে প্রবেশ করে ভাঙচুর করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।’

উন্মেষের সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ ঘোষ বাবু বলেন, ‘আমাদের মাইক, সাউন্ড বক্সসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ভাঙচুর করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের জন্য রবীন্দ্র গবেষক অসিত বরণ ঘোষ আসার কথা ছিল। কিন্তু ভাঙচুরের কারণে অতিথিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠান শুরুর কথা ছিল। তবে সেটা করা হচ্ছে না।’ছাত্রলীগের মিছিল থেকে রফিউর রাব্বীর কুশপুত্তলিকা দাহ

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের হানিফ খান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বাবু আরও বলেন, ছাত্রলীগের হামলায় তাদের তিন কর্মী আহত হয়েছে। আহতরা হলেন- বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলার সহসভাপতি ও উন্মেষ সংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য ফারজানা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া আক্তার সেতু ও উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শুভ বণিক। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
প্রদীপ ঘোষ বাবু আরও বলেন ‘রফিউর রাব্বী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে থাকার কথা ছিল। ছাত্রলীগ কর্মীরা রফিউর রাব্বীকে বাধা দিতে পারতো। কিন্তু তারা তা না করে রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠান বানচাল করতেই মূলত অবস্থান নেয় ও এসব ভাঙচুর করে।’

আহত সুমাইয়া আক্তার সেতু বলেন, ‘বিকালে ছাত্রলীগের কর্মীরা শহীদ মিনারে ভিতরে লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। পরে আশেপাশের চায়ের দোকানদার আমাদের শহীদ মিনার থেকে বের হয়ে যেতে সাহায্য করে।’

/এফএস/ 

আরও পড়ুন-