নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জাকির হোসেনের বাড়ি গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায়। তবে তিনি থাকতেন ঢাকার উত্তরার বাসায়। তিনি গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় ঝুট কাপড়ের ব্যবসা করতেন। কয়েকটি কারখানার টাকা দিতেই তিনি শুক্রবার (২১ জুলাই) রাতে উত্তরার বাসা থেকে রওনা দেন বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা। পথে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজেন্দ্রপুর ন্যাশনাল পার্কের ৩নং গেটের সামনে গাড়ি উল্টে পাশের খাদে পড়ে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের ভাই নাসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কয়েকটি পোশাক কারখানায় দেওয়ার জন্য শুক্রবার রাতে তিনি বাসা থেকে ২৭ লাখ টাকা নিয়ে বানিয়াচালার পথে রওনা হন। দুর্ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে পাওয়া গেলেও তার সঙ্গে থাকা টাকা পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ জাকিরের কাছ থেকে পাওয়া গেছে বলে জানিয়ে ১৭ হাজার পাঁচশ টাকা আমাদের দিয়েছে।’ এত বড় অঙ্কের কোনও টাকার হদিস না পাওয়া যাওয়ার কারণেই জাকিরের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নিহত জাকিরের ভাতিজা ও নাসির উদ্দিনের ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মো. সাগর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত কয়েক মাসে আমাদের পরিবারের সদস্যদের পুলিশের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছে। আমার জ্যাঠা রুহুল আমীন, চাচা সিদ্দিক ও সোলমানকে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নেওয়ার অভিযোগে আটক করেছিল পুলিশ। তাছাড়া আমার বাবার প্রাইভেটকার জোর করে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করা হয়। পরে হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. নাজমুলকে নগদ সাড়ে ৬ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি ছাড়িয়ে আনতে হয়।’ সাগর অভিযোগ করে বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমার বাপ-চাচাদেরকে বিভিন্ন অজুহাতে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে চাচা জাকির হোসেনের ব্যবসায়িক শত্রু বেলায়েত জড়িত রয়েছে।’ বেলায়েত হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সোর্স হিসেবে কাজ করেন বলেও জানান তিনি।
জাকিরের পরিবারের সদস্যদের করা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বেলায়েত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজেন্দ্রপুরের রাশিদুল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে আমি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তা জাকিরের পরিবারকে জানাই। তবে গত ৮/৯ বছর হলো জাকির হোসেনের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ নেই। জাকিরের পরিবারের অভিযোগগুলোরও কোনও সত্যতা নেই।’
এদিকে, জয়দেবপুর থানার হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান বলছেন, তাদের আগে সালনা হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল। আর নিহত জাকিরের সঙ্গে টাকা-পয়সা থাকার বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই বলেও দাবি করেন তিনি। জাকিরের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সময় হয়রানি ও টাকা নিয়ে মুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাকিরের পরিবারের সাথে আমার এরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগগুলো মিথ্যা। এসবের কিছুই আমি জানিনা।’
সরেজমিনে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মহাসড়কের দু’পাশে গভীর শালবন। ঘটনাস্থলের আশপাশে কোনও বাড়িঘর নেই। দুর্ঘটনার কবলে পড়া প্রাইভেটকারটি এখন সালনা হাইওয়ে থানায় রাখা আছে। গাড়িটির সামনের অংশ থেঁতলে গেছে ও ছাদ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।
জাকির হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় তার মরদেহের ময়নাতদন্ত না করা ও এখন পর্যন্ত মামলা দায়ের না করার কারণ জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভাইকে হারিয়েছি। মামলা করে আবার পুলিশের হয়রানির শিকার হতে চাই না, পরিবারের আর কোনও সদ্স্যকে হারাতে চাই না। আল্লাহ-ই বিচার করবে।’
আরও পড়ুন-
ম্যালেরিয়ার সংক্রমণে শীর্ষ তিন পার্বত্য জেলা
ইউএনও’র বিরুদ্ধে মামলা: পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি
/টিআর/