পদ্মার পানি বিপদসীমার ১০২ সেমি ওপরে, রাজবাড়ীতে ২৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি

 

বন্যায় রাজবাড়ীতে পানিবন্দি ২৭ হাজার পরিবারউজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত কয়েকদিনে পদ্মার পানি বেড়ে রাজবাড়ী জেলার চার উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকা ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া বন্যার কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে জেলার ৩৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৯৪৪ হেক্টর ফসলি জমি। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বানভাসি এলাকার এসব মানুষেরা।



শুক্রবার পর্যন্ত গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া গেজ স্টেশন পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ১২ ঘন্টায় বেড়েছে ১০ সেন্টিমিটার পানি।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার বলেন, ‘নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে তা এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। আগামী কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।’
সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। গোয়ালন্দের নদী তীরবর্তি এলাকার বানভাসি মানুষ জানিয়েছেন, বন্যায় বাড়িঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের ভেসে গেছে। কর্মহীন হয়ে মানবেতর দিন পার করছেন পানিবন্দিরা। সরকারিভাবে যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে তাদের। এছাড়া, পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধ এবং গৃহপালিত পশু নিয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে বলে জানান তারা।বন্যায় রাজবাড়ীতে পানিবন্দি ২৭ হাজার পরিবার
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু সাঈদ জানান, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম, উজানচর ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের ১৬ হাজার ৯০০ টি পরিবার পানিবন্দি হয়েছেন। এদের জন্য ৭৫ মেট্রিক টন চাল ও এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত ১৭ আগস্ট বিকেলে সরকারের জিআর (জেনারেল রিলিফ) প্রকল্পের আওতায় ২০০ পরিবারকে ৫০০ করে টাকা এবং ২০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল ত্রাণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হবে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এস এম মনোয়ার মাহমুদ জানান, সদর উপজেলার বরাট, মিজানপুর, চন্দনী ও খানগঞ্চ ইউনিয়নের ৩হাজার ৯৩১টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। এদের জন্য ৩৩ মেট্রিক টন চাল এবং এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল ১৭ আগস্ট বিকালে সরকারের জিআর (জেনারেল রিলিফ) প্রকল্পের আওতায় ২০০ পরিবারকে ৫০০ করে টাকা এবং ২০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল ত্রাণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হবে।
কালুখালী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মোকসেদুল আলম জানান, কালুখালী উপজেলার কালিকাপুর ও রতনদিয়া ইউনিয়নে বন্যায় ৩ হাজার ৮৯৪ টি পরিবার পানিবন্দি হয়েছেন। এদের জন্য ৩৮.৪৯০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে গত ১০ই আগস্ট পর্যন্ত পানিবন্দির সংখ্যা ছিল ২হাজার ৯৯৮ জন। এদের পরিবারপ্রতি গত সপ্তাহেই ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। এই এক সপ্তাহে আবার নতুন করে ৮৯৬টি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এদেরও শিগগিরই ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।
পাংশা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মিজানুর রহমান বলেন, পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৬৪৩টি পরিবার পানিবন্দি হয়েছেন। এদের জন্য ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। শিগগিরই তা বিতরণ করা হবে।
এদিকে, জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। পানিবন্দি হওয়ার কারণে ইতোমধ্যে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, বন্যায় পানিবন্দি হয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ৮টি, গোয়ালন্দে ১৩টি, কালুখালীতে ৪টি ও পাংশায় ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পানিবন্দির কারণে গোয়ালন্দে ৩টি, কালুখালীতে ১টি ও পাংশায় ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া গোয়ালন্দের আরও ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যা কবলিতরা আশ্রয় নেওয়ার কারণে ওই উপজেলায় মোট ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী জানান, রাজবাড়ী ১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। যতদিন বন্যার পানি থাকবে ততদিন পর্যন্ত বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ দেওয়া হবে। এছাড়া, বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর জন্য ৪টি উপজেলায় ২১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ৩টিতে ১১৯ টি পরিবার ইতিমধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় জেলার ৪ টি উপজেলায় ১হাজার ৯৪৪ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
/এফএস/