টাঙ্গাইলে ভেঙে ফেলা হলো পাকিস্তানের দুটি নামফলক

নামফলকস্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও টাঙ্গাইলের পৃথক দুটি স্থানে পাকিস্তানের নামফলক ছিল। টাঙ্গাইল জেলা প্রতিষ্ঠার ভিত্তিফলক এবং সোনালী ব্যাংক টাঙ্গাইল প্রধান শাখার ‘ন্যাশনাল ব্যাংক অব ইস্ট পাকিস্তান’ নামফলকের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। বিষয়টি জানার পর বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) টাঙ্গাইল সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখার কর্তৃপক্ষরা নামফলকটি ভেঙে ফেলেন। একই দিন বিকালে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে টাঙ্গাইল জেলা প্রতিষ্ঠার ভিত্তিফলকটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৬৯ সালের ১ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এস.এম আহসান টাঙ্গাইল জেলা প্রতিষ্ঠার ভিত্তিফলকটি উন্মোচন করেন। টাঙ্গাইল জেলা প্রতিষ্ঠার ভিত্তিফলকটি রয়েছে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মুখে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ফলকের ঠিক পাশে।
এদিকে ১৯৬৮ সালের ১৮ মে ন্যাশনাল ব্যাংক অব ইস্ট পাকিস্তানের টাঙ্গাইল শাখাটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অর্থমন্ত্রী ড. মির্জা নূরুল হুদা। এরপর ১৯৭১ সালের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। তারপর দেশের ব্যক্তিগত, স্বায়ত্বশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ব সব সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা পরিবর্তন করা হয়। নবগঠিত বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৭২ সালে অধ্যাদেশ জারি করে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং ব্যাংক অব বাহাওয়ালপুরকে অধিগ্রহণ করে ‘সোনালী ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠিত করে। তখন থেকেই ন্যাশনাল ব্যাংক অব ইস্ট পাকিস্তান বিলুপ্ত হয়ে যায়।
নামফলক-১২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল বিষয়টি প্রথম সবার নজরে আসলে সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন ডিজিএম নুর মোহাম্মদকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি সে সময় একটি কাগজ দিয়ে ঢেকে দেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত নামফলকটি উঠিয়ে ফেলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে গত দেড় বছরেও নাম ফলকটি অপসারণ বা স্থায়ীভাবে অপসারণ করা হয়নি।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান বলেন, ‘টাঙ্গাইল স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও পাকিস্তানের উদ্বোধনী দুটি নামফলক এতো দিন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে আসলো না কেন? একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটা আমি মেনে নিতে পারি না।’

টাঙ্গাইল সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার ডিজিএম মুশাররফ হোসেন বলেন,‘ প্রথমে বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। এটিকে আমরা বোর্ড দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলাম। পরে ফলকটি অপসারণ করা হয়েছে।’
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. নুরুল আমীন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি পরে জানতে পেরে দ্রুতই ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ রকম যদি আরও ভিত্তিফলক থেকে থাকে তা অপসারণ করা হবে।’