ঘন কুয়াশায় কাজে আসছে না কোটি টাকার ফগ লাইট

ফেরিতে লাগানো ফেগ লাইট কোনও কাজে আসছে নারাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এই নৌপথে প্রতিদিন হাজারও যানবাহন আর লাখো যাত্রী পদ্মা পাড়ি দেন। তবে শীতের মৌসুমে  ভোর ও রাতে  ঘন কুয়াশায় নদী পথ দেখতে না পাওয়ায় নিরাপত্তার কারণে বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি বন্ধ থাকায় ঘাটে তৈরি হয় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। এতে করে যাত্রীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ফেরিতে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট সংযোজন করা হলেও ঘন কুয়াশার কারণে তা কাজে আসছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,  ঘন কুয়াশার কারণে প্রতি বছরই রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে।  এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে  খান জাহান আলী,শাহ আলী,কেরামত আলী,ভাষা শহীদ বরকত ও কে-টাইপ ফেরি কপোতি, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর, শাহ আমানত ও শাহ পরান ফেরিতে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট সংযোজন করা হয়।

২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে পরীক্ষামূলকভাবে এ লাইটগুলো সংযোজন করা হলেও  ওই বছরের শীত মৌসুমে তা সুফল বয়ে আনতে পারেনি। তিন বছর পার হলেও লাইটগুলো মেরামতে বা আধুনিকায়নে কোনও উদ্যোগ  নেয়নি কর্তৃপক্ষ। শাহ আলী ফেরির  মাস্টার (চালক) পরিমল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘ফগ লাইট শুধু রাতের বেলায় নদী পথ দেখার প্রয়োজনে সামান্য কাজ করে। কিন্তু কুয়াশা ভেদ করে সামনে কিছুই দেখা যায় না। যে কারণে  ঘন কুয়াশা পড়লে  যানবাহন ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ফেরি সাময়িক বন্ধ থাকে।’ঘন কুয়াশায় বন্ধ থাকে ফেরি চলাচল

ঘন কুয়াশার কারণে শনিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখে ঘাট কর্তৃপক্ষ। এ সময় যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে মাঝ নদীতে আটকা পড়ে পাঁচটি ফেরি। আড়াই ঘণ্টা বন্ধ থাকার কারণে দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় আটকে পরে কয়েকশত যানবাহন। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে যানবাহনের জট।

ঢাকা থেকে ফেরি কেরামত আলীতে আসা বাসযাত্রী বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘প্রচণ্ড শীতের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে অবস্থান করতে হচ্ছে আমাদের। সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফেরিতে ফগ লাইট লাগিয়েছে। লাইটগুলো সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার হচ্ছে না।’

আরেক যাত্রী সোহাগ মিয়া বলেন, ‘ফেরিগুলো কুয়াশায় দিক হারিয়ে পদ্মার চরে আটকে যাচ্ছে। যে কারণে এই কুয়াশায় মাঝ নদীতে আতঙ্ক নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোনও দেখভাল নেই।’

কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা সবজি বোঝাই ট্রাকের চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এমনিতেই কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর ওপর ঘাটে এসে কয়েক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এছাড়া, ঘাটে বসে থেকে বাড়ে  পরিবহন খরচ।’

এব্যাপারে বিআইডব্লিটিসি দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক সফিকুল ইসলাম জানান, ‘ঘন কুয়াশা প্রাকৃতিক কারণ, এতে কারো হাত নেই। আমাদের এই রুটে চলাচলকারী বর্তমানে ১৬টি ফেরি আছে। কুয়াশায় যানবাহনের সিরিয়াল কিছুটা  দীর্ঘ হলেও কুয়াশা কেটে গেলে দ্রুত সময়ে যাত্রীদের পারাপার করা হয়।  আর ফেরিতে ফগ লাইটের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। কারণ, এটা প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।’

বিআইডব্লিউটিসি মেরিন বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ক্যাপ্টেন শওকত সরদার বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফগ লাইটগুলো বাস্তবসম্মত ছিল না। সেগুলো পরীক্ষামূলকভাবে লাগানো হয়েছিল।’ 

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)  আরিচা এরিয়া অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল হক অপু বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘ঘন কুয়াশার মধ্যে ফগ লাইট আসলেই কোনও কাজ করছে না। ইতোপূর্বে বিভিন্ন মিডিয়াতে এসংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নেই।’  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুস সামাদ জানান, ‘বিষয়টি আমি অবহিত নই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।’