নরসিংদীতে সপ্তাহব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বাউল মেলা

নাগরদোলানরসিংদীতে ঐতিহ্যবাহী বাউল মেলা বসেছে। শহরের কাউরিয়াপাড়ায় মেঘনা নদীর তীরে প্রায় ৫০০ বছর ধরে চলে আসা এ মেলা বাউল আখড়াধামে রবিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল থেকে শুরু হয়, যা চলবে আগামী শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত। মেলায় সমবেত হয়েছেন দেশ-বিদেশের শতাধিক বাউল। মেলা উপলক্ষে মেঘনার পাড়ে খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের স্টল বসিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

আসবাবপত্রের দোকানবাউল ঠাকুরের আখড়াবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫০০ বছর ধরে চলে আসছে এই বাউল উৎসব। ৫০০ বছর আগের এক বাউল ঠাকুরের স্মরণে এই মেলার আয়োজন করা হয়। তবে কে প্রথম এখানে মেলার আয়োজন করেন, তার প্রকৃত তথ্য জানা নেই কারও। জানা যায়, সর্বশেষ ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এখন পর্যন্ত মেলার আয়োজন করছেন স্বর্গীয় নদী রাম বাউল। পরবর্তীতে তাঁর নাতী মনীন্দ্র চন্দ্র বাউল ও বর্তমানে তাঁর ছেলে সাধন চন্দ্র বাউল, মৃদুল বাউল মিন্টু, শীর্ষেন্দু বাউল পিন্টু, মলয় বাউল রিন্টু এবং প্রাণেশ কুমার ঝন্টু বাউল। বর্তমানে প্রাণেশ কুমার ঝন্টু বাউল নরসিংদীর বাউল আখড়া বাড়ির সেবায়েত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নানা ধরনের খাবারের দোকানপ্রতি বছরের মতো এ বছরও মেলা উপলক্ষে আখড়াধামে হাজির হয়েছেন পাশের দেশ ভারতসহ দেশ-বিদেশের শতাধিক বাউল সাধক। আত্মশুদ্ধি আর আত্মমুক্তির জন্য এ মেলায় আসেন তারা, তুলে ধরেন মানবপ্রেমের গান। পূণ্যস্নান, মহাযজ্ঞ ও পূজা অর্চনায় যোগ দিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে বাউল ও পূণ্যার্থীর আগমন ঘটছে মেলায়।

এদিকে, বাউল মেলা উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা বাঙালির চিরচেনা মুখরোচক খাবার ও বাহারি পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে আমিত্তি, জিলাপি, সন্দেশ, বারো মিঠাই, দই, মুড়ালি, গুড়ের তৈরি মুড়ি চিড়ার মোয়া, তিলের মোয়া, তিলের সন্দেশ, খাস্তা, কদমা, নারকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ু, খাজা, গজা, নিমকি, মনাক্কা, গাজরের হালুয়া, পিঠাসহ রকমারি খাবার।

মেলায় এলাকাবাসীর ভিড়এছাড়া খেলনা, ঘরের তৈজসপত্র, আসবাবপত্র, বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক, মাটি ও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রসহ নানা ধরনের পণ্যের স্টল বসেছে।

বাউল আখড়াবাড়ির সেবায়েত প্রাণেশ কুমার ঝন্টু বাউল বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও ঐতিহ্যবাহী এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বাউল সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী, মাঘি পূর্ণিমা তিথিতে মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বাউল ঠাকুরের যজ্ঞানুষ্ঠান ও বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মেলার মূল আয়োজন করা হয়। কোনও প্রকার প্রচারণা ছাড়াই প্রতিবছর জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠে এই মেলা।’