আমাকে মাফ করে দিও!

নাহিদুল ইসলাম তুষার‘আমাদের ভবনে আগুন লেগেছে। এই মুহূর্তে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। এখান থেকে বেরুতে পারবো কিনা, জানি না। আমাকে মাফ করে দিও। আমার জন্য দোয়া করো। সবাইকে দোয়া করতে বলো।’ ঢাকার বনানীতে এফ আর টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় নিহত নাহিদুল ইসলাম তুষারের কথা এগুলো। আগুন দেখে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার নদীকে ফোনে শেষবারের মতো এসব কথা বলেন তিনি।

মাহমুদা আক্তার নদী জানান, তুষার মোবাইলফোনে তার বাবা এছাক আলী, মা নুরুন্নাহার, বড় ভাই তুহিন, ছোট ভাই শিশিরের সঙ্গেও কথা বলেন। দুপুর দুইটার পর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

তুষারের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই ইউনিয়নের ভানুয়াবহ গ্রামে।

এফআর টাওয়ারের ১৪ তলায় হ্যারিটেজ ট্রাভেলস এজেন্সিতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তুষার প্রায় চার বছর আগে হ্যারিটেজ ট্রাভেলস এজেন্সিতে চাকরি নেন। পাঁচ বছর আগে বিয়ে করেন। তুষারের বাবা পাবলিক হেলথে চাকরি করতেন। এখন অবসরে। বাবার উপার্জনের টাকা দিয়ে ওই সময় তিন ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালতো। দুই ভাই বেকার থাকায় মাস্টার্স শেষ করে চাকরিতে ঢোকেন তুষার।

তুষারের চাচা আবুল হোসেন বলেন, ‘তিন ভাইয়ের মধ্যে তুষার দ্বিতীয়। দুই ভাই এখনও বেকার রয়েছে। তুষারের উপার্জনের টাকা দিয়ে তাদের সংসার কোনোভাবে চলছিল।’

তুষার ছাত্রজীবনে মাগুরা জেলা ক্রিকেট টিমের সদস্য ছিল। বিকেএসপিতে খেলতো। বাঁ হাতি পেসার তুষারের স্বপ্ন ছিল জাতীয় পর্যায়ে খেলার। কিন্তু, সংসারের অবস্থা তেমনটা ভালো না থাকায় চাকরি জীবন শুরু করে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাতে তুষারের মরদেহ ভানুয়াবহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ। এছাড়া, আগুনে ৫৯ জন আহত ও অসুস্থ হয়ে রাজধানীর আটটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: 

এখন কে বলবে, মা তুমি ওষুধ খেয়েছো?

ফোনে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন বগুড়ার মিথি

ঈদে বাড়িতে আসার কথা ছিল রুমকি-মাকসুদার

নিজেদের নিরাপত্তায় আমাদের ৫ করণীয়