বৃষ্টি উপেক্ষা করে শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লি

01

সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি ঝরলেও এবারও দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত হয়েছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। বুধবার (৫ জুন) সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে শুরু হওয়া জামাতে ইমামতি করেন ইসলামি চিন্তাবিদ, ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে নামাজ শেষে মোনাজাতে বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।



আমাদের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার রাত থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয় কিশোরগঞ্জে। সকালে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। এরমধ্যেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোর থেকেই হাজার হাজার মুসল্লির জনস্রোত নামে সড়কে। অগণিত মানুষের বিশাল বহর গিয়ে মিশে শোলাকিয়া মাঠে। সকাল ৯টার আগেই কানায় কানায় ভরে যায় শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ।

03এদিকে ঈদ জামাতকে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ রাখতে পুরো শহরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। ভোরের আগেই শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বন্ধ করে দেওয়া হয় সব ধরনের যানবাহন চলাচল। ফলে মুসল্লিদের পায়ে হেঁটে শোলাকিয়া মাঠে যেতে হয়। শোলাকিয়া মাঠ ও আশপাশের এলাকায় কার্যকর করা হয় চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড ও দেশের কয়েকটি স্থানে হামলা এবং এর আগে ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনা মাথায় রেখে এবার নিরাপত্তার বিষয়গুলো সাজানো হয়েছে।’
সবার সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ায় মুসল্লিদের ধন্যবাদ জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক মানুষকে সামলাতে একবারের জন্যও পুলিশকে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়নি। সবাই ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জামাতে অংশ নিয়েছেন।’

শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে এবার পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, এক হাজার ২০০ পুলিশ, ১০০ র‌্যাব, এপিবিএন ও বিপুল সংখ্যক আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিশ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এছাড়াও মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে বসানো সিসি ক্যামেরা ও ১২টি ওয়াচ টাওয়ার। এবার সুনির্দিষ্ট ৩২টি গেট দিয়ে দেহ তল্লাশির পর মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় মুসল্লিদের। নজদারিতে আকাশে টহল দিয়ে বেড়ায় ড্রোন ক্যামেরা। মাঠের নিরাপত্তায় প্রস্তুত রাখা হয় মাইন সুইপিং ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ তল্লাশি করা হয় মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। আর প্রথমবারের মতো ওয়াচ টাওয়ারগুলোতে স্নাইপিং রাইফেল নিয়ে দায়িত্ব পালন করে র‌্যাবেব স্নাইপাররা।02
রেওয়াজ অনুযায়ী, শোলাকিয়ায় জামাত শুরুর আগে শটগানের ৬টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সংকেত দেওয়া হয়। গুলির শব্দের সংকেত পেয়ে শুরু হয় ঈদের জামাত।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘নিরাপত্তায় কড়াকড়ির পরও এবার চার লক্ষাধিক মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এটি শোলাকিয়ার প্রতি মানুষের ভালোবাসারই নিদর্শন।’