‘মাঝরাতে ছেলে আমাকে ফোনে জানায়, তাকে আর পাওয়া যাবে না’

শ্রীপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত পারভেজের লাশ (ছবি– প্রতিনিধি)

গাজীপুরের শ্রীপুরে ‘ডাকাতির প্রস্তুতির সময় বন্দুকযুদ্ধে’ আট মামলার আসামি মাসুদ পারভেজ ওরফে পারভেজ (৩৩) নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে র‍্যাব। তবে নিহতের মায়ের অভিযোগ, সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে তার ছেলেকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় তারই বন্ধু ইয়াবা ব্যবসায়ী মিজান। পরে ‘বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে পারভেজকে গুলি করে’ মারে র‍্যাব।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টম্বর) রাত আড়াইটার দিকে শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর বাজারের পাশে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন পারভেজ। তিনি উপজেলার বরমী মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে।

এ ব্যাপারে নিহতের মা রানি বেগম বলেন, ‘পারভেজের নামে পাঁচটি মামলা চলমান। সব মামলায় সে জামিনে রয়েছে। কোনও হত্যা ও অস্ত্র মামলা নেই। মামলা থাকায় সে তার শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহে গিয়ে থাকতো।’

রানি বেগম দাবি করেন, “সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে আমার বাড়িতে আসে পারভেজের বন্ধু ইয়াবা ব্যবসায়ী মিজান। গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় যাওয়ার কথা বলে সে পারভেজকে প্রাইভেটকারে করে নিয়ে যায়। কিন্তু ওইদিন (সোমবার) রাতে পারভেজ ফোন করে আমাকে জানায় মিজান তাকে কাদের হাতে যেন তুলে দিয়েছে। পারভেজ বলে, ‘আমার মেয়েকে তোমার কোল থেকে ছেড়ো না। আমাকে আর পাওয়া যাবে না’। একথা বলার পরই পারভেজকে কে যেন একটা গালি দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে ফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়।’

রানি বেগমের অভিযোগ, “এরপর ওইদিন (সোমবার) রাত তিনটার দিকে মিজান আমাকে ফোন করে বলে, ‘চাচি, তোমার ছেলের ওপর আমার প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেছে’। একথা বলে সে ফোন বন্ধ করে দেয়।”

‘বন্দুকযুদ্ধে’র প্রসঙ্গে র‌্যাব-১ সহকারী পরিচালক (এএসপি) কামরুজ্জামান জানান, সাতখামাইর এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি চলছে বলে র‌্যাব গোপন সংবাদে জানতে পারে। পরে র‌্যাবের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে গেলে ডাকাতরা তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে। র‌্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছুড়লে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। এ সময় সোহরাব হোসেন নামে র‌্যাবের এক কনস্টেবল আহত হন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে ঘটনাস্থলে একজনকে পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। মাসুদ পারভেজের নামে বিভিন্ন থানায় ৮টি ডাকাতি, দু’টি হত্যা এবং অস্ত্র আইনে একটি  মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ছয়টি শটগান এবং একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়।

কাঁদছেন পারভেজের মা (ছবি– প্রতিনিধি)

নিহতের মায়ের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘পারভেজের পরিবারের অভিযোগগুলো ঠিক নয়। আসলে মাদকসেবী ও অপরাধীরা মুখে এক কথা বলে, কিন্তু করে ভিন্ন কাজ। পারভেজ তার পরিবারকে কাজের ব্যাপারে ঠিক তথ্য দেয়নি।’

এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহমুদ হাসান বলেন, ‘আজ (বুধবার) ভোর ৪টার দিকে পারভেজকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার দেহে গুলির আঘাত ও রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন ছিল।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।