বিখ্যাত মানুষের মিলনমেলা যে বাড়িতে!

ভাস্কর্য তৈরিতে ব্যস্ত কারুশিল্পী বিবেকানন্দ মণ্ডল

গোপালগঞ্জের কারুশিল্পী বিবেকানন্দ মণ্ডলের বাড়িটি যেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কবি-সাহিত্যিক, মনীষী ও দেব-দেবীর মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। তারা সবাই জীবিত না হলেও কাঠ খোদাই করে তৈরি তাদের মূর্তিগুলো জীবন্ত করার চেষ্টায় ব্যস্ত শিল্পী বিবেকানন্দ।

তার শিল্পকর্মে উঠে এসেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দ, মাদার তেরেসা, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, গৌতম বুদ্ধ, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, লোকনাথ ব্রহ্মচারী, সরস্বতী, মনসা দেবী, গণেশ পাগল। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য বাদ্যযন্ত্র। তার তৈরি ভাস্কর্য বিভিন্ন মন্দিরে পূজা অর্চনার জন্যও স্থান পেয়েছে।

বিবেকানন্দ বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এ কাজ করেছি। লেখাপড়া শিখে খ্যাতি অর্জনের স্বপ্ন ছিল। দরিদ্রতার কারণে ওই স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি।’

তিনি আরও জানান, ১৯৭৫ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সে লেখাপড়া ছেড়ে কাজে যোগ দিতে হয়েছে। তার বাবা বুদ্ধিমন্ত মণ্ডল কৃষক ছিলেন। বাবা একা সবার খরচ চালাতে না পারায় তিনি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই সংসারের হাল ধরতে কাঠমিস্ত্রির যোগালি (সাহায্যকারী) হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে আসবাবপত্র তৈরির কাজ শিখেন।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিবেকানন্দ মণ্ডলের তৈরি বিভিন্ন শিল্পকর্ম

এলাকায় তিনি এখন আসবাবপত্র তৈরির একজন ভালো মিস্ত্রি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তার বড় হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি বলে তিনি জানান। তাই আসবাবপত্র তৈরির ফাঁকে ফাঁকে কাঠ খোদাই করে ভাস্কর্য তৈরি করে চলেছেন। আর্থিক অসংগতি আর অভাবের কারণে তিনি এসব শিল্পকর্ম প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি।

ছেলেমেয়েদের  লেখাপড়া আর সংসারের খরচ জোগাতেই প্রতিনিয়ত হিশশিম খেতে হচ্ছে এই শিল্পীকে। এলাকায় কাজ কম থাকায় প্রায়ই তাকে দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করতে যেতে হয়। এতো প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও তিনি রাতে বিভিন্ন ভাস্কর্য তৈরি করে থাকেন। তার একটি মাত্র লক্ষ্য, খ্যাতি অর্জন করা।

বিবেকানন্দ বলেন, ‘এরইমধ্যে আমার তৈরি কাঠের মূর্তি স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ জাদুঘর ও গণভবনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতের বিভিন্ন মন্দিরেও স্থান করে নিয়েছে আমার কাঠে খোদাই করা বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ফেলারাম পাগলের মন্দিরের জন্য দেড়শ মূর্তি তৈরি করেছি। বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার পিঁপড়ার ডাঙ্গা গ্রামে একটি সেবা আশ্রমের জন্য ২০টি দেব-দেবীর মূর্তি সংবলিত রথ তৈরির কাজ করেছি।’ তার তৈরি শিল্পকর্ম দেখে অনেকেই কারুশিল্পী হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলেও তিনি জানান। 

বিবেকানন্দ মণ্ডলের তৈরি বিভিন্ন ভাস্কর্য

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দীনেশ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘আমরা সবাই তাকে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে জানলেও তার আলাদা কিছু গুণ আছে। তিনি ছোটবেলা থেকে কাঠের ভাস্কর্য তৈরি করছেন। তবে তিনি আর্থিকভাবে অসচ্ছল। সরকার বা কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্পী দেশের জন্য অনেক বড় সম্পদে পরিণত হতে পারতো।’