সাবেক প্রতিমন্ত্রী রহমত আলী আর নেই

রহমত আলীআওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক সমবায় প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলী আর নেই। তিনি রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। যুবলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও তার জুনিয়র অ্যাডভোকেট হারুন-অর রশীদ ফরিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন রহমত আলী। এসব সমস্যা নিয়ে তিনি স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানেই তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।
রহমত আলী আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিতে উপদেষ্টা পরিষদের সিনিয়র সদস্য ছিলেন। তিনি যুবলীগের সাবেক সহ-সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। 

প্রধানমন্ত্রীর শোক

রহমত আলীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোক বার্তায় তিনি মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং এ তথ্য জানায়।

এছাড়া রহমত আলীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ প্রমুখ।

স্পিকারের শোক

রহমত আলীর মৃত্যুতে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় স্পিকার বলেন, ‘দেশের প্রতিটি আন্দোলনে রাজপথের লড়াকু সৈনিক অ্যাডভোকেট রহমত আলী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তার মৃত্যুতে জাতি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ানকে হারালো। স্পিকার মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

এছাড়া অ্যাডভোকেট রহমত আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এবং চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী।

সংসদ উপনেতার শোক

গাজীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রহমত আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি। সংসদ উপনেতা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। সংসদ উপনেতার কার্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন এ তথ্য জানান। 

জানা যায়, অ্যাডভোকেট রহমত আলী আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, অষ্টম জাতীয় সংসদে কার্যপ্রণালী বিধি এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, নবম জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং দশম জাতীয় সংসদে সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

রহমত আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১১ বছর বয়সে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৬২ সালের ১৭ এপ্রিল শ্রীপুর হাইস্কুল মাঠে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে গ্রেফতার হন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়ে তিন মাস কারাভোগ করেন। ১৯৬৬ সালে ৭ জুন তেজগাঁও শিল্প এলাকায় মিছিলে নেতৃত্ব দান এবং গ্রেফতার হোন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে তাজউদ্দীন আহমদের পক্ষে প্রচারণার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটারের সঙ্গে মি. বুশ ও জি এম চ্যার্টাজির সঙ্গে সমন্বয় করে ফ্লাইট কুরিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।