নারায়ণগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যান এহসান সাময়িক বরখাস্ত

এহসান উদ্দিন আহমেদজন্ম নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্স বাবদ ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলাধীন বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদকে।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে চূড়ান্তভাবে তাকে কেন বরখাস্ত করা হবে না সে বিষয়ে জানতে চেয়ে চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এছাড়াও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অপর এক স্মারকে আত্মসাত করা টাকা আদায়ের জন্য চেয়ারম্যান এহসান ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ ইউসুফের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে মন্ত্রণালয়ের এই আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে প্রকাশ হয়।

এর আগে, জন্ম নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্স বাবদ ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিব মোহাম্মদ ইউসুফকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ এই দুই অর্থ বছরের জন্ম নিবন্ধন ও ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাসের ট্রেড লাইসেন্স খাতে আদায়কৃত অর্থ আত্মসাত করেছেন বন্দর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ ও তার সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ। এই দুই খাতে মোট ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এ ঘটনায় অডিট আপত্তি তোলা হয়। পরে তদন্তে নামে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

সংস্থাটির তদন্তে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জন্ম নিবন্ধন ফি বাবদ ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৩৮০ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে একই খাতে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭২০ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৯০০ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তদন্তে এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে উক্ত টাকা আদায়সহ ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে। একই সঙ্গে আত্মসাত করা টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়।

তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউপি সচিবকে বরখাস্ত করা হলেও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি আত্মসাৎ করা টাকাও আদায় করা হয়নি। এ বিষয়ে সেই সময় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।

এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় বা জেলা প্রশাসন থেকে এখনও চিঠি পাইনি। জেলা প্রশাসক হয়ে চিঠি আমার কাছে আসবে। চিঠি হাতে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বন্দর ইউপির সচিব হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ ইউসুফ। এখান থেকে তাকে বদলি করা হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। সর্বমোট দেড় বছর তিনি এই ইউপির দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ঘটেছে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ এই দুই অর্থ বছরের জন্ম নিবন্ধন এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স খাত থেকে ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ঘটেছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তদন্তে এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে উক্ত টাকা আদায়সহ ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে। তবে কোনও এক কারণে ইউসুফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও চেয়ারম্যান পদে বহাল থেকে যান এহসান।

তবে সচিব ইউসুফ তখন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বলেছিলেন, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে তিনি ছিলেন না এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বদলি হয়ে যান। সুতরাং তিনটি অডিট আপত্তির একটিতে তিনি ছিলেন। বাকি দুটিতে তিনি ওই ইউনিয়নে ছিলেন না। ওই সময় যারা সচিব ছিলেন তাদের অভিযুক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু তারা অভিযুক্ত হননি।

সচিব ইউসুফ অভিযোগ করে বলেন, পুনঃতদন্তের সুযোগে আমি আমার ডকুমেন্ট সাবমিট করেছি। এখন বিভাগীয় মামলা চলছে। তবে চেয়ারম্যান সাহেব নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে আমাকে ফাঁদে ফেলে আমাকে দিয়েই পুরো টাকা পরিশোধ করাতে চাইছেন।