করোনা উপেক্ষা করে ঢাকামুখী মানুষের ঢল

ঢাকামুখী শিমুলিয়া ঘাটের দিকে আসা একটি ফেরির চিত্র (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ঈদের ছুটি শেষে ঢাকামুখী মানুষের ঢল দেখা গেছে শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে। পদ্মা পার হয়ে এই পথেই দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষ কর্মস্থলে ফিরছেন। করোনা পরিস্থিতি এবং গণপরিবহন না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।
শনিবার (৩০ মে) মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে এই দৃশ্য দেখা গেছে। সরেজমিনে পাটুরিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, নৌপথে ফেরিতে কর্মস্থলমুখী মানুষের ঢল। করোনা পরিস্থিতিতেও ছিল না শারীরিক দূরত্ব। প্রায় প্রতিটি ফেরি থেকেই শত শত যাত্রী নামে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও জীবিকার তাগিদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, ব্যাটারিচালিত আটোবাইক, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পাটুরিয়া থেকে ঢাকা ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছুটছেন। থাকছে না সামাজিক দূরত্বের কোনও বালাই।’

কুষ্টিয়া থেকে ঢাকামুখী যাত্রী আব্দুল মোন্নাফ বলেন, ‘সংসার চালানোর তাগিদে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই কর্মস্থলে ফিরছি। রবিবার সকালে অফিসে পৌঁছাতেই হবে।’

পাটুরিয়া ঘাট এলাকাফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে পাটুরিয়া ঘাটে আসা পোশাক শ্রমিক মামুন মিয়া বলেন, ‘ফরিদপুর থেকে সিএনজিতে দৌলতদিয়া পর্যন্ত আসতে ৫০০ টাকা খরচ হয়। আবার এখন পাটুরিয়া থেকে নবীনগর যেতে মাইক্রোবাসে ৫০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। এমনিতেই বাড়ি গিয়ে টাকা পয়সা শেষ। এরপর এখন কর্মস্থলে ফিরতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এ তো মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।’

আরেক কর্মস্থল ফেরত যাত্রী পোশাক শ্রমিক আফরোজা বেগম বলেন, ‘কুষ্টিয়া থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত সিএনজিতে আসতে ৬০০ টাকা ভাড়া নেয়। এখন কর্মস্থল সাভারে যেতে প্রাইভেটকারে ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। সবমিলে কর্মস্থলে ফিরতে ১২০০ টাকা খরচ হচ্ছে।’

এদিকে শিমুলিয়া ঘাটে ঢাকামুখী হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে কাঁঠালবাড়ি থেকে ফেরি আসতে দেখা গেছে। এই নৌরুটে সকাল থেকেই ১৪টি ফেরি চলাচল করে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেও ফেরিতে গাদাগাদি করে পদ্মা পার হন যাত্রীরা। শিমুলিয়া ঘাটে আসার পর গণপরিবহন বন্ধ দেখে কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় মিশুক, অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে যাত্রীরা গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের এজিএম শফিকুল ইসলাম জানান, দক্ষিণবঙ্গমুখী যাত্রীদের সংখ্যা কম। তবে কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বেশি।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে মাওয়া ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. হিলাল উদ্দিন বলেন, ‘আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে বেশি ভাড়ার ব্যাপারে আমরা তেমন কোনও পদক্ষেপ নিতে পারি না। কারণ, যে সকল যানবাহনে করে যাত্রীরা যাচ্ছে সেগুলো গণপরিবহন নয়। তারপরেও ঘাটের শৃঙ্খলা রক্ষায় গত ২৪ ঘণ্টায় রেকার বিল বাবদ ৬০ থেকে ৬৫টি যানকে প্রায় ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’