পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন

পানিতে তলিয়ে গেছে ধান ক্ষেত



ঘূর্ণিঝড় আম্পান এবং এর প্রভাবে কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব ধান হয়তো কয়েকদিনের মধ্যেই কৃষক তার ঘরে তুলতো। অনেকেই পানিতে ডুবে ডুবে ধান কাটছেন। আবার কারও কারও ক্ষেতে পানি কম থাকায় তারা সহজেই ধান কাটতে পারছেন।

পানিতে তলিয়ে গেছে ধান ক্ষেত

জেলার বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলায় গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে বংশাই নদীর পানি উপচে পড়ে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৩০০ হেক্টর ফসলি জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন হাজারো কৃষক। কোথাও কোথাও বোরো ক্ষেত একেবারেই তলিয়ে গেছে। আবার কোনও ক্ষেতের ধান কিছুটা দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় যতটুকু সম্ভব কৃষকরা ধান কাটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ শ্রমিকের অভাবে পানির নিচে থাকা ধান কাটতেও পারছেন না।

তলিয়ে যাওয়া ক্ষেত থেকে ধান কাটা হচ্ছেসরেজমিনে বাসাইল উপজেলার বাসুলিয়া, কাঞ্চনপুর, পূর্বপৌলী, মটেশ্বর, পূর্বমটেশ্বর, আগমটেম্বর, সিঙ্গারডাক, যৌতুকী ও মির্জাপুর উপজেলার পাটদিঘী, সুতানরী, বৈন্নাতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

তলিয়ে যাওয়া ক্ষেত থেকে ধান কাটা হচ্ছে

মটেশ্বর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রায় তিন একর জমি বর্গা নিয়ে বোরো আবাদ করেছি। ফলনও এবার ভালো হয়েছিল। কয়েকদিন আগে প্রায় এক একর জমির ধান কেটেছি। কিন্তু দু’দিনের মধ্যে ক্ষেতে পানি এসে আমার দুই একর জমির ধান তলিয়ে গেছে। শ্রমিকের অভাবে ধানগুলো কাটতে পারিনি।’


তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করি। তিন একর জমিতে প্রায় ৮০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছিল। এবার সব শেষ হয়ে গেলো। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার মতো আমার কোনও উপায় নেই।’


পানিতে তলিয়ে গেছে ধান ক্ষেত
একই এলাকার কৃষক মোমরেজ আলী বলেন, ‘আমার প্রায় চার একর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত দুই একর জমির ধান পানি থেকেই কেটেছি। শ্রমিকরা পানিতে ধান কাটতে চাচ্ছে না।’


কৃষক সোনা মিয়া বলেন, ‘ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এখন ১১০০ টাকা দিয়ে শ্রমিক নিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। প্রায় ৫ একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। এ পর্যন্ত ৩ একর জমির ধান কেটেছি।’




জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘জেলার বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে ১১০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক কৃষক ইতোমধ্যেই ধান কেটে ফেলেছেন। অনেকে এখনও পানির নিচ থেকেই ধান কাটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, এবার জেলায় এক লাখ ৬৯ হাজার ৫২৯ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৭০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে।