‘শ্বাসরোধে হত্যার পর সাইফুলের লাশ নদীতে ফেলে দেয় বন্ধুরা’

গ্রেফতার নজরুল ইসলামগাজীপুরের কালীগঞ্জে পিকনিকে গিয়ে মদ খেয়ে নেচে গেয়ে মাতলামি ও গালিগালাজ করার জেরে খুন হয়েছেন ব্যবসায়ী সাইফুল। শ্বাসরোধে হত্যার পর বন্ধুরা সাইফুলের লাশ বালু নদীতে ফেলে দেয়। চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনায় জড়িত থাকায় নৌকার মাঝি নজরুল ইসলামকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রায় পাঁচ বছর পর চাঞ্চল্যকর এ খুনের রহস্য উম্মোচিত হলো।

শনিবার (২৪ অক্টোবর) ভোরে বাসাবাসি এলাকা থেকে গ্রেফতার নজরুল ইসলাম গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার বাসাবাসি এলাকার সাইজ উদ্দিনের ছেলে।

গাজীপুর পিবিআই পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার বাসাবাসি এলাকার রফিজ উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩০) তরকারির ব্যবসা করতেন। ২০১৫ সালের ১৪ আগস্ট বালু নদী থেকে তার ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় নজরুলকে শনিবার ভোরে বাসাবাসি এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতার হওয়া নজরুলকে আদালতে হাজির করা হলে সে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পর কালীগঞ্জের ব্যবসায়ী সাইফুল খুনের রহস্য উন্মোচন হলো।

তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার নজরুল স্বীকারোক্তিকালে লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। সে জানায়, ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট সকালে পিকনিকে যাওয়ার জন্য চার বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সাইফুল স্থানীয় বাসাবাসি ঘাট থেকে নজরুলের ইঞ্জিনচালিত নৌকা (ট্রলার) ভাড়া করে সারদী বাজারের দিকে রওনা হন। নৌকাটি ঘাট থেকে ছাড়ার পরপরই তারা রুটি ও মাংস খেয়ে মদ পান করতে শুরু করে। নৌকায় গান গেয়ে নাচানাচি করতে থাকে তারা। কয়েক ঘণ্টা মদ খেয়ে নেচে গেয়ে মাতলামি শেষে দুপুরের দিকে তারা পুনরায় বাসাবাসি ঘাটের দিকে ফিরছিল। পিকনিকে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত মদ পান করায় সাইফুল অন্যদের চেয়ে বেশি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। মদের নেশায় মাতলামি করার একপর্যায়ে সাইফুলের সঙ্গে নৌকার অন্যদের কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। সাইফুল তাদের বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এ সময় সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে তার সঙ্গীরা। সাইফুলকে হত্যার বিষয়টি জানতে পেরে নৌকার মাঝি নজরুল ইসলামও এ পরিকল্পনায় অংশ নেয়। একপর্যায়ে সাইফুল নৌকার ছৈয়ের ভিতর চলে আসে। হঠাৎ সাইফুলের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে নজরুল। এ সময় অন্যরা সাইফুলের হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে। পরে নিহত সাইফুলের লাশ বালু নদীতে ফেলে দিয়ে তারা বাড়ি ফিরে আসে। তারা গ্রামের লোকজনকে জানায়, অধিক মদ খেয়ে মাতলামি করে নাচানাচি করার সময় সাইফুল নৌকা থেকে নদীতে পড়ে পানিতে পড়ে ডুবে গেছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান আরও জানান, পরদিন ১৪ আগস্ট বালু নদী থেকে সাইফুলের ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু ময়নাতদন্ত রিপোর্টে শ্বাসরোধে তাকে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেলে এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর ওই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটির তদন্ত শেষে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত রিপোর্ট আমলে না নিয়ে স্বতোঃপ্রণোদিত হয়ে ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), গাজীপুর জেলাকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নজরুলকে শনিবার ভোরে বাসাবাসি এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।