যুবরাজ মার্কেট অপসারণে বিআইডব্লিউটিএ’র নোটিশ





যুবরাজ সুপার মার্কেট

নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন বন্দর থানার গঙ্গাকূল ‘ম’ খণ্ড মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গায় নির্মিত যুবরাজ মার্কেট অপসারণে মো. জাকির ওরফে জাকির শাহ পীরকে নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ। 

২৯ নভেম্বর (রবিবার) যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) শেখ মাসুদ কামাল স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে যুবরাজ মার্কেটের মালিক মো. জাকির হোসেন বরাবর ওই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর অনুলিপি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নৌ পুলিশ সুপার, বন্দরের ইউএনও, বন্দরের এসিল্যান্ড, বন্দরের ওসি এবং নৌ-পুলিশের ওসিকেও দেওয়া হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নদী ভরাট এবং অবৈধ দখলের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ কর্তৃক মহামান্য হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নং-৩৫০৩/০৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য আদালত নদী দখলদার উচ্ছেদসহ নদীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, নদীর তীরভূমিতে স্থায়ী কাঠামো অপসারণ এবং বালু বা অন্য কোনোভাবে নদী ভরাট সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার আদেশ দেন। এছাড়া মহামান্য হাইকোর্টের রিট পিটিশন-১৫৩৩৩/১২-এর আদেশেও অনুরূপভাবে নদী ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে জেলা প্রশাসন, নারায়ণগঞ্জ, জরিপ অধিদফতর, বিআডব্লিউটিএ এবং সংশ্লিষ্ট অন্য দফতর সমন্বয়ে সিএস নকশা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার উক্ত এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। নদীর সীমানা চিহ্নিত করার পর গৃহীত জিপিএস অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ হতে উক্ত এলাকায় লাল নিশান এবং লাল দাগ দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন বন্দর থানার গঙ্গাকূল ‘ম’ খণ্ড মৌজায় সাম্প্রতিককালে আপনি শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গায় লাল নিশান ও দাগ অতিক্রম করে অবৈধ এবং বেআইনিভাবে যুবরাজ মার্কেট নামে একটি পাকা মার্কেট নির্মাণ করেছেন। উক্ত নির্মাণ কাজ শুরুর প্রাক্কালে আপনাকে সরাসরি মহামান্য হাইকোর্টের আদেশটি অবহিত করা হয়েছে এবং এ অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। তারপর বিভিন্ন সময়ে বারণ করা শর্তেও বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে সরকার ঘোষিত লকডাউনের মধ্যে আপনি নির্মাণ কাজ চলমান রাখেন এবং নির্মাণ সম্পন্ন করেন। আপনার এরূপ কার্যক্রম সরকারি আদেশ লঙ্ঘনসহ সরাসরি মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের বরখেলাপ।
এমতাবস্থায়, নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার গঙ্গাকূল ‘ম’ খণ্ড মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গায় নির্মিত অবৈধ যুবরাজ মার্কেট নামীয় পাকা স্থাপনাটি পত্র জারির সাত দিনের মধ্যে নিজ খরচে সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করে তীরভূমি ও নদী পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। এ নোটিশটি চূড়ান্ত নোটিশ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য বলা হলো। পরবর্তীতে উক্ত স্থাপনা উচ্ছেদে আপনাকে আর কোনও প্রকার নোটিশ প্রদান করা হবে না। অন্যথায় উক্ত স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে এবং উচ্ছেদের সমুদয় ব্যয় আপনার নিকট থেকে আদায় করা হবে। একইসঙ্গে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অবমাননায় আপনার বিরুদ্ধে আদালত অবমামনার অভিযোগ দাখিল করা হবে।
এর আগে গত ১০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে বন্দর ঘাট এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ।
ওই সময়ে বন্দরের গঙ্গাকূল মৌজায় পীর জাকির শাহের নির্মাণাধীন যুবরাজ মার্কেটের শতাধিক দোকানঘর উচ্ছেদ করতে গেলে বিআইডব্লিউটি’এর অভিযানে বাধা দেন দখলদাররা। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডায় হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। তখন পীর জাকির শাহের কাছ থেকে দোকান ক্রয়কারী এক ব্যক্তি ভেকুর অপারেটরকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তাদের মার্কেটে ভেকু দিয়ে ভাঙচুর করলে ভেকু অপারেটরকে হত্যা করে সে ফাঁসিতে ঝুলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়। পরে পীর জাকির শাহের নিয়োজিত আইনজীবী হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ দেখালে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ পিছু হটে।
পরে ১৫ নভেম্বর বন্দর ১ নং খেয়াঘাটস্থ ময়মনসিংহ পট্টি এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বিশাল সমাবেশ করে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রতি হুঁশিয়ারি দেন পীর জাকির শাহ। এছাড়া বর্তমান সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজন তার কাছের লোক বলেও বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের প্রতি সাবধান বাণী উচ্চারণ করেন তিনি। অথচ এই পীর জাকির শাহের বিরুদ্ধে শুধু বিআইডব্লিউটিএ’র জমিই নয় রেলওয়ের পুকুরও দখল এবং ভরাটের অভিযোগ রয়েছে।
বন্দর ১ নং খেয়াঘাটস্থ ময়মনসিংহ পট্টি এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ'র অবৈধ উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় সভাপতি'র বক্তব্যে জাকির শাহ বিআইডব্লিউটিএ'র কর্মকর্তাদের প্রতি হুংকার দেন। তিনি বলেন, বেহায়া ও বেশরম কিছু অফিসার আছে তারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে সরকারের বদনাম করার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মা। আমি আমার মায়ের কাছে যাবো এবং আপনাদের কথা বলবো। এদেশে কিছু মন্ত্রী ও কিছু এমপি আমার মুরিদান রয়েছে।  এখানে আমার অনেক মুরিদানের জয়গা সম্পত্তি রয়েছে। সম্পদ রক্ষা করা ইমানি দায়িত্ব। এ আসনের সাবেক এমপি নাসিম ওসমান আমার ছেলে। সে আজ বেঁচে থাকলে এখানে আমাকে আসতে হতো না। অনেক পীর ফকিররা রাজনীতি করে আমি রাজনীতি করি না।
তিনি আরও বলেন, এখানে এসেছি সত্যটা বলার জন্য। বন্দর জন্মভূমি এই কারণে আমাকে এখানে আসতে হয়েছে। পাট মন্ত্রণালয় থেকে বন্দরে সাধারণ জনগণ সরকারকে টাকা পয়সা দিয়ে সাব কবলা দলিল মূলে সাব রেজিস্ট্রি মাধ্যমে উক্ত জমি ক্রয় করে । অথচ মাসুদ করিম নামে একজন মানুষের ক্রয়কৃত সম্পত্তি ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। এবং কিছু স্থাপনা ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর সিএস জরিপ অনুযায়ী নদীর সীমানা উদ্ধারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এদিকে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে বন্দর ঘাট এলাকায় পীর জাকির শাহ শতাধিক দোকান ঘর নিয়ে যুবরাজ মার্কেট নির্মাণ করছেন। গেলো বছরের ডিসেম্বরে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ’র উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে ওই মার্কেট রক্ষায় আদালতে একটি  রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন পীর জাকির শাহ। তখন হাইকোর্ট ৬ মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন।