রূপগঞ্জে আ.লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১২

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কাঞ্চন পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতিক এর রূপসীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে তার বাড়িতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা হলেও সংঘর্ষ হয়নি বলে দাবি করেছেন মন্ত্রী।

স্থানীয় ও  প্রত্যেক্ষদর্শীরা জানান, কাঞ্চন পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পনির হোসেনের সঙ্গে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুর কলির দির্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জেরে গত সোমবার গোলাম রসুল কলি, মোহন মিয়ার নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে উপজেলার তারাইল এলাকায় পনিরের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীরা অফিসের আসবাবপত্র, টেলিভিশন, সিসি ক্যামেরা, মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় প্যানেল মেয়র পনির হোসেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। এ সময় মন্ত্রী তিন দিনের মধ্যে ঘটনাটির সুষ্ঠু সমাধান হবে বলে আশ্বাস দেন। অন্যথায় তার বাড়িতে যেতে বলেন।

তিন দিনের মধ্যে হামলার ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার না পেয়ে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে প্যানেল মেয়র পনির হোসেন, তার পিতা আলিমুদ্দিনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মন্ত্রীর রূপসীর বাড়িতে যান। একই সময় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল ও মোহন মিয়া তার লোকজন নিয়ে সেখানে যান। পনির হোসেন ও তার পিতা মন্ত্রীর সঙ্গে ঘরের ভেতর আলোচনা করা অবস্থায় বাইরে পনিরের কর্মী-সমর্থকদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালান গোলাম রসূল ও মোহনের নেতৃত্বে কাশেম মাওলা, সাইফুল্যাসহ ২০-২৫ জন। পরে মন্ত্রীসহ পনির এবং অন্যান্য লোকজন বাইরে বের হয়ে এলে মন্ত্রীর সামনেই ফের পনিরের ওপর হামলা চালায় তারা। হামলায় পনির, হাসান, শরিফ, ফারুক, রাশেদসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। এ সময় মন্ত্রী পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। 

এ ব্যাপারে প্যানেল মেয়র পনির হোসেন বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে সেটা মন্ত্রী মহোদয়ের সামনে তার বাড়িতে ঘটেছে। তিনি এ ঘটনার সমাধান করবেন। এ ব্যাপারে আমি গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি নই।’

এ ব্যাপারে কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল কলি বলেন, ‘বিরোধ মীমাংসা করার জন্য সকালে আমাদের ডেকে নেন মন্ত্রী । কিন্তু পনির হোসেন বিপুল সংখ্যক লোক নিয়ে মন্ত্রীর নামে মিছিল করে বাড়িতে যান। এ সময় আমি, মোহন, পনির ও পনিরের বাবা মন্ত্রী বাসায় প্রবেশ করি। কিছুক্ষণ পর বাইরে হৈচৈ শুনে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি পনিরের লোকজন আলমগীর নামে আমর এক কর্মীকে মারধর করছে। পরে পনির ঝগড়া থামাতে গিয়ে নিজেই মারামারিতে লিপ্ত হয়ে পড়েন। পরে লোকজন পনিরকে মারধর করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রীর এপিএস এমদাদ হোসেন সরাসরি প্যানেল মেয়র পনির হোসেনকে সমর্থন দেওয়ায় তিনি এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ঝগড়া চলার সময় এমদাদ আমাকে ধমকায়। এ সময় তাকে বলেছি, আমি এপিএস এর রাজনীতি করি না। আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি।’

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মহসিনুল কাদির বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কোনও লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতিক বলেন, ‘সকালে কাঞ্চন পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কাঞ্চন পৌরসভার প্যানেল মেয়র পনির হোসেন এবং কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল কলিকে বিরোধ মেটানোর জন্য আমার বাড়িতে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু দুই পক্ষই বিপুল সংখ্যক সমর্থক নিয়ে আসে। এসেই উত্তেজিত হয়ে উঠে। দুই পক্ষকেই পরে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে বলে জানিয়ে যার যার বাড়িতে চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাড়িতে কোনও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি দাবি করেন।