১৩ বছর আগে ‘খুন হওয়া’ রুবেলকে নিয়ে থানায় হাজির আসামিরা

হত্যা ও গুম করার অভিযোগে দায়ের করা মামলার ‘ভিকটিম’ জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছেন ১৩ বছর পর। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের কুড়েরপাড় গ্রামের রুবেল ওরফে আল আমিন নামে এক কিশোরকে হত্যার পর গুম করা হয়েছিল বলে আদালতে মামলা করেছিলেন তার পরিবার। মামলায় দুইজন মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৯ জনকে আসামি করে ২০০৭ সালে দায়ের করা ওই মামায় জেলও খেটেছেন কয়েক আসামি।

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার (২০ মে) রাত ৯টার দিকে এলাকাবাসী ও জামিনে থাকা আসামিরা সেই কিশোর রুবেলকে জীবিত-অক্ষত এবং যুবক অবস্থায় নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় হাজির হন।

এদিকে ফিরে আসা সেই রুবেল ওরফে আল আমিন জানায়, সে তার মা রহিমা খাতুনের মারধর ও ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে আসে। পরে নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে ট্রেনযোগে কমলাপুর যায়। সেখানে দীর্ঘদিন মানুষের কাছে হাত পেতে খেয়ে বেঁচেছিল। এরপর এক লোকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর ওই লোক রামপুরা একটি হোটেলে কাজ নিয়ে দেয় তাকে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে সে। বর্তমানে মগবাজার মধুবাগ হাতিরঝিল সংলগ্ন মসজিদের পাশে ভাড়ায় বসবাস করে সেখানেই রং মিস্ত্রির কাজ করছিল রুবেল। আসল নাম রুবেল হলেও মগবাজারে রং মিস্ত্রি আল আমিন নামে পরিচিত।

রুবেল আরও জানায়, বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ১০ বছর পর তার সঙ্গে তার মায়ের যোগাযোগ হয়। পরে সে কুঁড়েরপাড় আসতে চাইলে তার মা বলে, ‘তোকে এলাকায় নিয়ে গেলে মেরে ফেলবে’। গত ৬ বছর ধরে সে এলাকায় আসতে চাইলেও তার মা তাকে আসতে দেয়নি বলে জানায় রুবেল। এক পর্যায়ে তার মাকে না জানিয়েই বুধবার রাতে কুঁড়ের পাড় নিজ বাড়িতে ফিরে আসে সে।

এদিকে বৃহস্পতিবার (২০ মে) দুপুরে মামলার আসামিরা বিষয়টি জানতে পেরে তাকে আটক করে। মামলার বাদী রহিমা খাতুন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পলাতক রয়েছেন। রুবেলের বাবার নাম জানু মিয়া। এলাকাবাসী জানায়, মামলার বাদী রহিমা খাতুন এলাকায় মামলাবাজ মহিলা হিসেবে পরিচিত। সে মিথ্যা মামলা থেকে তার আত্মীয়-স্বজনকেও ছাড় দেয়নি। মিথ্যা মামলা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তার মূল লক্ষ্য।

রুবেলের ফিরে আসার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম বলেছেন, মামলাটি বেশ কয়েক বছরের পুরনো। পুলিশ ও ডিবি এর আগে মামলাটি তদন্ত করেছিল। আগামীকাল (শুক্রবার) ভিকটিমকে আমরা আদালতের জিম্মায় দেবো এবং আদালতের পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।