সয়াবিনের বিকল্প হবে বারি সরিষা

ফরিদপুরের চরাঞ্চলসহ পুরো জেলার অধিকাংশ মাঠ এখন সরিষার হলুদ ফুলে সেজেছে। মাঠজুড়ে শুধু হলুদ আর হলুদ। দূর থেকে দেখলে মনে হয় বিশাল হলুদ চাদর বিছানো। সদর উপজেলার চরাঞ্চল নর্থ চ্যানেল, আলিয়াবাদ ও মুনসুরাবাদ এলাকায় বারি সরিষা-১৮ চাষ হচ্ছে। এই জাতের সরিষায় ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। এ ছাড়া বারি সরিষা-১৮ সয়াবিন তেলের বিকল্প হতে পারে বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।

শুধু চরাঞ্চলেই নয়, পুরো জেলায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বারি সরিষা-১৮-এর চাষ করে লাভবান হচ্ছেন ফরিদপুরের চাষিরা। অন্য সরিষার চেয়ে ফলন বেশি হওয়ায় আবাদ দিন দিন বাড়ছে। 

জেলার ৯টি উপজেলাতেই কম-বেশি সরিষার আবাদ হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি সরিষা আবাদ হয় ফরিদপুর সদর, মধুখালী, বোয়ালমারী ও সালথা উপজেলায়।

ফরিদপুরে এবার সাড়ে আট হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ

সালথার চাষি আকরাম হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল বারি সরিষা-১৮ চাষে সব মিলে খরচ হয় চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমির সরিষা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। অল্প খরচে অধিক লাভ। রোগবালাই তেমন হয় না। অন্য জাতের চেয়ে অধিক ফলন হওয়ায় বারি সরিষা-১৮ চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে, বাজারে চাহিদাও প্রচুর। সঠিক দাম পেলে আগামীতে আরও চাষ করবো।

মধুখালী উপজেলার বাগাট এলাকার চাষি দেবাশিষ দাস জানান, এ বছর সরিষার ভালো ফলন হবে। এখন পর্যন্ত কোনও সমস্যা দেখা যায়নি। বরং গাছগুলো সুন্দর আর স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠেছে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় বারি সরিষা-১৮, বারি সরিষা-১৭, বারি সরিষা-১৪, টরি-৭-সহ প্রায় সাড়ে আট হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে।

রি সরিষা-১৮ সয়াবিন তেলের বিকল্প হতে পারে

ফরিদপুর বিএডিসি’র ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মাহমুদুল ইসলাম খান জিয়া জানান, বারি সরিষা-১৮-তে ইরুসিক এসিড খুবই কম, যা মানবদেহের ক্ষতি করে না। এই তেলে উপকারী কোলেস্টরেল রয়েছে। সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে বারি সরিষা-১৮ তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।

তিনি আরও জানান, বীজ উৎপাদন করে সারা দেশের চাষিদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বারি সরিষা-১৮ চাষ বৃদ্ধি পেলে আগামীতে আর সয়াবিন তেল বাইরে থেকে আমদানি করতে হবে না। ফলে বিদেশ থেকে সয়াবিন তেলের আমদানি কমে আসবে। দেশের চাষিরাও লাভবান হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. হযরত আলী বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় আট হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। বপন থেকে শুরু করে ফলনে সময় লাগে ৮০-৯০ দিন। এরইমধ্যে সব জমিতে সরিষা আবাদ শেষ হয়েছে।